অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

বর্তমান যুগ অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ। ইন্টারনেটের কল্যাণে পৃথিবীর সমস্ত তথ্যভাণ্ডার আজ আমাদের সম্মুখে উন্মুক্ত। সোশ্যাল মিডিয়া তথ্যের প্রবাহকে আরো সহজ করে দিয়েছে। তথ্য প্রবাহের অবাধ গতি মানবদেহের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘটনা ঘটতে দেরি হচ্ছে বটে, কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে না।

গত কয়েক বৎসরে দেশে তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো শত শত অনলাইন নিউজ পোর্টাল মানুষের ধর্মীয় আবেগ, রাজনৈতিক মতভেদ ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়নকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ভুয়া, চটকদার, উস্কানিমূলক ও বিকৃত নিউজ প্রকাশ করছে। নিউজের সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করে লাইক, শেয়ার, কপি ও ট্যাগের মাধ্যমে ১৩৫ কোটির অধিক ফেবু ইউজারের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার মহান দায়িত্ব পালন করছি আমরা। কারো কারো ভাবখানা এমন যেন দুনিয়া-আখিরাতের অশেষ কামিয়াবি হাসিল করছেন। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা এটা এখন বিবেচ্য বিষয় নয়। নিজ মত বা দর্শনের সাথে মিলে গেলেই কেল্লাফতে। শুরু লাইক, শেয়ার, কপি, ট্যাগ আর আমিনের ঝড়। অথচ প্রত্যেকটা নিউজের লাইক, শেয়ার, কপি ও ট্যাগের মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পূর্বে সত্যতা যাচাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ফলে নষ্ট হচ্ছে আমাদের ব্যক্তিক ও সামাজিক সম্পর্কের সুদৃঢ় বন্ধন। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আমাদের জাতীয় রাজনীতিতেও পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে একখানা গুরুত্বপূর্ণ হাদিস পেশ করছি- হযরাত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে (বিনা বিচারে) তা-ই বর্ণনা/প্রচার করে।’’ (মুসলিম)। মুসলিম ও বুখারি শরীফের অন্য হাদিসে একে মুনাফিকের অন্যতম লক্ষণ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক ও বিবেকবোধসম্পন্ন মানুষ এ ধরণের সমাজ ও রাষ্ট্র বিধ্বংসী কাজ কখনোই করতে পারে না। চরিত্র হনন, ধর্মের অপব্যাখা ও ধর্মানুভূতিতে আঘাত এবং গুজব রটানোর জন্য ফেবুকে আমরা উত্তম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। সব ধর্ম অনুযায়ী এ ধরণের কাজ-কর্ম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমাদের ধর্মানুভূতি কোনক্রমেই যেন অন্যদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত না আনে বা মনকষ্টের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

পরধর্মে হিংসা/নিন্দা করার নাম যেমন ধার্মিকতা নয়, ঠিক তেমন প্রগতিশীলতাও নয়; বরং এগুলো নিছক ভণ্ডামি ছাড়া আর ভিন্ন কিছু নয়। এমনকি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বা আবেগ-অনুভূতি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যাতে হুমকি না হয় তার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। যেকোনো নিউজের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে প্রচার থেকে বিরত থাকা উচিত। একটি ভুয়া নিউজ প্রচার বহু নির্দোষ মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে কিংবা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। রামু বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা এর অন্যতম উদাহরণ। এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে আমাদের সত্যসন্ধানী হওয়া নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বটে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতেও অনলাইন পোর্টালগুলো গুজব প্রচার ও তথ্য বিকৃতির ঘৃণ্য প্রতিযোগিতায় মত্ত। আর আমরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মতো ফেবুতে লাইক ও শেয়ারে ব্যস্ত সময় পার করছি। রোহিঙ্গা ইস্যুটি মানবিক হলেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলা উচিত।

আসুন নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। সত্যকে আঁকড়ে ধরি। প্রকৃত সত্য প্রকাশে সচেষ্ট হই। জীবনের সর্বক্ষেত্রে মূল্যবোধবর্জিত আবেগ পরিহার করি এবং সহানুভূতিসম্পন্ন বিবেকবোধ জাগ্রত করি। হলুদ নেটিজেন সাংবাদিকতাকে না বলি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সত্য নিউজ প্রচারে ‘যাচাই’কে সহযোগিতা করি। সত্যসন্ধানে ‘যাচাই’র পথচলা সফল হোক।

ভালো থাকুন। ভালো রাখুন।

সত্যসন্ধানী আলোকিত মানুষ হোন।


অনলাইনে চলমান বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আপনার গঠনমূলক পর্যবেক্ষন কিংবা অভিমত আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো। আমাদের পাঠাতে হবে [email protected]এই ঠিকানায়। অথবা যাচাই-এর ফেসবুক পেইজ-এ সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারেন।

পাদটীকা

মন্তব্য