ফেইসবুক ক্লোনিং হচ্ছে একটি কৌশল যেখানে প্রতারকরা কোন একজন ব্যক্তির প্রোফাইলের (বিশেষত যা সবার জন্য উন্মুক এমন) তথ্য ও ছবি চুরি করে একটি নকল প্রোফাইল খুলে এবং সেটি ব্যবহার করে ঐ ব্যক্তির ছদ্মবেশে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজ করে থাকে।
একাউন্ট ক্লোনিং করা নিয়ে ফেইসবুকে একটি বার্তা প্রচার করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে, যা মূলত আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে প্রচারিত ইংরেজি বার্তার একটি বাংলা অনুবাদ:
বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে যে, আমাদের প্রায় সবার একাউন্ট ক্লোন করা হচ্ছে। আপনার প্রোফাইল পিকচার এবং নাম দিয়ে আরেকটি একাউন্ট খোলা হচ্ছে। তারা আপনার বন্ধুকে বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে আর আপনার বন্ধুরা আপনি ভেবে তা গ্রহণ করছে আর বিভিন্ন সরকার বিরোধী ধর্মবিরোধী যা আপনাকে ফাঁসাতে লেখা ছবি পোস্ট করবে। এই সুযোগে এই তস্করের দল তাদের বার্তা ছড়াবে আপনার পরিচয়ে।
“আমি নিশ্চিত করে জানাচ্ছি যে, আমার নামে দ্বিতীয় আর কোন একাউন্ট বা গ্রুপ খোলার কোন ইচ্ছা বা পরিকল্পনা আমার নেই। তাই আমার কাছ থেকে দ্বিতীয় কোন রিকোয়েস্ট আসলে তা গ্রহণ করবেন না। এবং কেউ আমার পরিচয়ে ভ্রান্তি ছড়ালে আমি দায়ী নই।”
এই ম্যাসেজটি কপি করে আপনার ওয়ালে পেস্ট করে পোস্ট দিয়ে রাখুন আমিও রাখলাম।
নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান…।
এটি নতুন কোন প্রতারণার কৌশল না। যেহেতু এটি করার জন্য বিশেষ কোন কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না, স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সাথে এই কৌশলে প্রতারণার ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তথা অন্য কোন দেশে “প্রকট আকারে” এই ধরনের কিছু হচ্ছে বলে এমন কোন প্রতিবেদন পাওয়া যায় নি। “প্রায় সকল” ফেইসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইল ক্লোন করা হচ্ছে এটি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য না। কারণ ফেইসবুকের মোট প্রোফাইল সংখ্যা ১.৮৭ বিলিয়ন। এর অর্ধেক সংখ্যক প্রোফাইলও ক্লোন করা প্রায় দুঃসাধ্য।
প্রচারিত বার্তাটি, যা অন্য দেশগুলোতেও এইভাবে ভাইরাল করা হয়েছে, তা নিজ নিজ প্রোফাইলে শেয়ার করলে তেমন কোন সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। কেননা –
১) সবাই বার্তাটি দেখবে সেই ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা নেই
২) সবাই এই ধরণের বার্তা একই সাথে পোস্ট করলে সেটির বিশেষ কোন অর্থ থাকে না
৩) এছাড়াও এটিকে কোন “আইনী নোটিশ” হিসেবে গণ্য করা যায় না
এটি কি কোন প্রকার “হ্যাকিং”?
ফেইসবুক ক্লোনিং ঠিক একাউন্ট হ্যাক করে করতে হবে তা না। অর্থাৎ, প্রতারকরা কারো একাউন্ট ক্লোন করলেই ভাবার দরকার নেই যে একাউন্টি হ্যাক হয়েছে বা তারা কোনভাবে একাউন্টে প্রবেশের অধিকার পেয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা কেবল একাউন্টের “সবার জন্য উন্মুক্ত” বা “পাবলিক” তথ্যগুলোই ব্যবহার করে নকল প্রোফাইল খুলে থাকে।
ক্লোন প্রোফাইল থেকে কিভাবে প্রতারণা করা হয়?
সর্বপ্রথম মূল প্রোফাইলের অধিকারীকে এই “নকল প্রোফাইল” থেকে ব্লক করে দেওয়া হয় যাতে তিনি প্রোফাইলটি দেখতে কিংবা রিপোর্ট করতে না পারে। এরপর তার বন্ধু তালিকা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে “ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট” পাঠানো হয়। অসাবধানতা বশত তার বন্ধুরা এমন “ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট” পেলে মনে করতে পারে হয়তো তারা কোনভাবে ভুলকরে ঐ ব্যক্তিকে “আনফ্রেন্ড” করে দিয়েছিলো অথবা সেই ব্যক্তি যে তার সাথে ফেইসবুকে সংযুক্ত আছে সেটিই তাদের খেয়াল নাও থাকতে পারে। ফলে তারা “রিকুয়েস্ট”টি গ্রহণ করে এবং প্রতারকরা একাউন্টে প্রবেশাধিকার অর্জন করে।
তালিকায় কিছু বন্ধু জোগাড় করতে সমর্থ হওয়ার পর “নকল প্রোফাইল” থেকে সাধারণত যেসকল ক্ষতিসাধন করা হয় তা হল –
১। তারা বন্ধুদের কাছে নিজের কিংবা অন্যের বিপদের কথা উল্লেখ করে টাকা ধার চেয়ে বার্তা পাঠায়। যেহেতু, বার্তা পাওয়ার পর অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি মনে করে যে এটি তার পরিচিত কেউ পাঠিয়েছে, সে সেটি বিশ্বাস করে এবং টাকা পাঠিয়ে দেয়।
২। তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের প্রশ্ন করে কিংবা প্রোফাইল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অথবা বিভিন্ন লিংক পাঠিয়ে তাদের ইমেইল কিংবা সোশ্যাল একাউন্ট হ্যাক করে প্রবেশাধিকার লাভ করে।
৩। বন্ধু হিসেবে প্রবেশাধিকার পাওয়ায় তালিকার বন্ধুদের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা ছবি চুরি করে আরও বিশ্বাসযোগ্য নকল প্রোফাইল তৈরি করে।
৪। বিভিন্ন অশ্লীল ছবি ভিডিও কিংবা বাজে কথা পোস্ট করে যে ব্যক্তিটির নামে প্রোফাইলটি খোলা হয়েছে তাকে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ব্যক্তিগত প্রতিশোধের জন্য এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে।
কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন?
১। ফেইসবুকে কোন তথ্য “পাবলিক” কিংবা “বন্ধুদের বন্ধু” প্রাইভেসি দিয়ে প্রকাশ করার সময় সতর্ক থাকুন। নিজের কিংবা বন্ধু ও পরিবারের সাথে তোলা ছবি, ফোন নম্বর, কর্মস্থল বিষয়ক তথ্যগুলো বিবেচনার সাথে প্রকাশ করুন। বিশেষত এমন কিছু যা দেখিয়ে আপনার বন্ধুদের বিশ্বাস অর্জন করা যাবে সেসব বিষয় প্রকাশে সাবধান থাকুন।
২। বন্ধু তালিকা গোপন রাখুন। কারণ আপনার এই বন্ধু তালিকাকেই ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে “ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট” পাঠানো হবে।
৩। কোন প্রোফাইল থেকে “ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট” আসলে সেটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে প্রোফাইলটি ঘেঁটে দেখুন। বিশেষত পরিচিত কারোর নামে হলে পরিচিত ব্যক্তিটি ইতিমধ্যে আপনার বন্ধু তালিকায় আছে কিনা সেটির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে নিন। যদি প্রোফাইলটি ক্লোন বলে সন্দেহ হয়, তবে আপনার বন্ধুকে এই ব্যাপারে অবগত করুন।
৪। আপনার ও আপনার বন্ধুদের ফেইসবুক প্রোফাইল একটি ব্যক্তিগত জায়গা। সেখানে কাউকে যোগ করার আগে ভেবে-শুনে করুন।
৫। ফেইসবুকের “প্রাইভেসি চেক” চালিয়ে আপনার প্রোফাইলের বিভিন্ন দিকগুলো ঠিক করে নিন। [1]
৬। ফেইসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন এ্যাপ বিশেষত যেসব “আপনার কোন বন্ধুর সাথে চেহারার মিল আছে” কিংবা “আপনার কোন বন্ধু আপনাকে পছন্দ করে” ইত্যাদি বলে প্রলুব্ধ করে, সেসব এ্যাপে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
৭। আপনার প্রোফাইল “পাবলিক” ভাবে দেখতে কেমন এবং কি কি তথ্য দিচ্ছে তা দেখে নিন। [2]
আপনার একাউন্ট ক্লোন হলে কি করবেন?
১। আপনার প্রোফাইল থেকে বন্ধুদের বিষয়টি অবগত করুন এবং আপনার নাম ব্যবহার করে দ্বিতীয় কোন একাউন্ট থেকে “রিকুয়েস্ট” পাঠালে তা অগ্রাহ্য করতে বলুন। তারা যদি নকল প্রোফাইল থেকে আগত “রিকুয়েস্ট” অগ্রাহ্য করতে থাকে তাহলে ফেইসবুক “সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড” বিবেচনা করে নতুন রিকুয়েস্ট পাঠানোর ক্ষমতা ব্লক করে দিতে পারে।
২। কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলুন। কোন সন্দেহজনক বিষয় পরিলক্ষিত হলে আপনাকে সরাসরি যোগাযোগ করে সেটির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে অনুরোধ করুন।
৩। প্রোফাইলটি রিপোর্ট করতে অনুরোধ করুন। প্রোফাইলটি আপনি নিজে দেখতে পারলে আপনিও রিপোর্ট করুন।
৪। আপনার বার্তাটি পরবর্তী ক’দিন একাধিকবার পোস্ট করুন। যেহেতু অনেকেই প্রথমবার সেটি অবলোকন নাও করতে পারে।
অনলাইনে চলমান বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আপনার গঠনমূলক পর্যবেক্ষন কিংবা অভিমত আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো। আমাদের পাঠাতে হবে [email protected]এই ঠিকানায়। অথবা যাচাই-এর ফেসবুক পেইজ-এ সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারেন।