হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ১০, ১৭, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে মিয়ানমারের “মংদো” জেলার ৫টি গ্রামের স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যবেক্ষণ করে ১৮ নভেম্বর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই রিপোর্টে সর্বমোট ৮২০টি স্থাপনা/ঘর ধ্বংসের নিদর্শন চিহ্নিত করা হয়। ইতিপূর্বে আরও ৪৩০টি স্থাপনা ধ্বংসের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
গ্রাম ভিত্তিক ক্ষতির চিত্র
- এয়ায় খাত চাউং গো সন – ২৫৫টি স্থাপনা
- দার গিয়া যার – ২৬৫টি স্থাপনা
- উইন্ত পেউ চাউং – ৬৫টি স্থাপনা
- মও তাং – ১৫টি স্থাপনা
- ওয়া পেইক – ২২০টি স্থাপনা
এছাড়াও থার্মাল অ্যানমলি ডাটা (তাপমাত্রার বৈসাদৃশ্য উপাত্ত) পর্যবেক্ষণ করে “উইন্ত পেউ চাউং” গ্রামে ১২ নভেম্বর, “দার গিয়া যার” গ্রামে ১৩ নভেম্বর, “এয়ায় খাত চাউং গো সন” গ্রামে ১৩, ১৪, ১৫ নভেম্বর জ্বলন্ত আগুনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ঘন গাছপালার কারণে ধ্বংসকৃত বাড়ি-ঘরের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি। তাই প্রকৃত ধ্বংসাবশেষের সংখ্যা এর থেকেও বেশী হতে পারে।
[sciba leftsrc=”http://www.jaachai.com/assets/uploads/2017/01/Rohingya-village_HRW_Report_Wa-Peik_before.jpg” leftlabel=”ওয়া পেইক গ্রাম পূর্বে” rightsrc=”http://www.jaachai.com/assets/uploads/2017/01/Rohingya-village_HRW_Report_Wa-Peik_after.jpg” rightlabel=”ওয়া পেইক গ্রাম পরে” mode=”horizontal” width=””]
ছবি: © 2016 Human Rights Watch
[sciba leftsrc=”http://www.jaachai.com/assets/uploads/2017/01/Rohingya-village_HRW_Report_Yae-Khat_before.jpg” leftlabel=”এয়ায় খাত চাউং গো সন গ্রাম পূর্বে” rightsrc=”http://www.jaachai.com/assets/uploads/2017/01/Rohingya-village_HRW_Report_Yae-Khat_after.jpg” rightlabel=”এয়ায় খাত চাউং গো সন গ্রাম পরে” mode=”horizontal” width=””]
ছবি: © 2016 Human Rights Watch
আমাদের পর্যালোচনা
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর হামলা ও গণহত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিঃসন্দেহে সত্য
অক্টোবর ৯ তারিখে মাংডু অঞ্চলে তিনটি পুলিশ পোস্টে হামলায় ৯জন পুলিশ নিহত হয়। মিয়ানমার পুলিশ রোহিঙ্গা জঙ্গি সংস্থাগুলোকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে। যারই জের ধরে নভেম্বর মাসে এই অঞ্চলে সেনা অভিযান পরিচালনা করা হয়।
আল-জাজিরা ও বিবিসির মত আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে “সেনা অভিযানের” মাধ্যমে মিয়ানমারে এই “সহিংসতা” পরিচালনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারও এই অভিযানের কথা স্বীকার করেছে। সরকারের দাবী মতে এটি “রোহিঙ্গা জঙ্গিদের” উচ্ছেদ করার জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে মতে অনেক “সাধারণ” অধিবাসী এই অভিযানের শিকার হয়েছে। কিন্তু সরকারের কড়া নজরদারি ও অসহযোগিতার কারণে এই রিপোর্টগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয় নি। এছাড়াও সেদেশের সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ “হিউম্যান রাইটস ওয়াচ”-এর এই রিপোর্টের সাথে অসামঞ্জস্য এবং অনেকাংশে বেশি।
সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতায় ঘর-বাড়ি হারিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি দেয়। বাংলাদেশ সরকার কঠোরভাবে এই “পুশ-ব্যাক” প্রতিরোধ করার পরও অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গোপনে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এমনই একটি পয়েন্ট থেকে “সময় টিভির” একটি রিপোর্টে পালিয়ে আসা কিছু মানুষের সাক্ষাৎকারেও খুন, ধর্ষণ ও গ্রাম ধ্বংসের ঘটনাগুলোর কথা উঠে আসে। এসকল অধিবাসীরাও “সেনাবাহিনী” কর্তৃক এসব তাণ্ডব পরিচালনার কথা স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে কিছু চরম ডানপন্থী গ্রুপের নেতারা প্রায় সময় সংখ্যালঘুদের (বিশেষত, মুসলমান ধর্মালম্বিদের) উপর বিদ্বেষমূলক কথা ছড়িয়ে প্রতিহিংসামূলক সহিংসতার উস্কানি দিয়ে থাকে। এমনই একজন নেতা, “উ ওইরাথু”-কে নিয়ে টাইমস ম্যাগাজিন “বৌদ্ধ নৃশংসতার মুখ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাকে “বার্মার বিন লাদেন” হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। “রোহিঙ্গা জঙ্গিদের” লড়তে সেদেশের সরকার অমুসলিম জনগোষ্ঠীকেও অস্ত্র ও মিলিটারি ট্রেনিং প্রদান করছে বলে আল-জাজিরার একটি রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়।
নিম্নে রাখাইন প্রদেশ থেকে আল-জাজিরার একটি সচিত্র রিপোর্ট এখানে দেওয়া হল।
https://www.facebook.com/aljazeera/videos/10154918011553690/
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে কিছু তথ্য
মিয়ানমারের কিছু কিছু বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গার ঘটনা নতুন কিছু না হলেও ২০১২ সালে “রাখাইন” প্রদেশে একটি ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর এই বিদ্বেষের পরিমাণ বাড়তে থাকে। সেই বছরে প্রায় ১১০,০০০ রোহিঙ্গা থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়।
রোহিঙ্গাদের বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু জাতি। ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী, সেদেশের সরকার তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। নাগরিকত্ব পেতে তাদের ৬০ বছর মিয়ানমারের অধিবাসী হিসেবে প্রমাণ দিতে হয়, যা যথেষ্ট পরিমাণ নথিপত্র না থাকার কারণে প্রমাণ করা দুঃসাধ্য। মিয়ানমার সরকার ভাষাগত সামঞ্জস্যতা থাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে “বাঙ্গালী” ও “দেশান্তরিত বাংলাদেশী” হিসেবে দাবী করে, বাংলাদেশে নানান সময় “পুশ-ব্যাক” করার চেষ্টা করে। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত মোট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৩-৫ লাখ।
অনলাইনে চলমান বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আপনার গঠনমূলক পর্যবেক্ষন কিংবা অভিমত আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো। আমাদের পাঠাতে হবে [email protected]এই ঠিকানায়। অথবা যাচাই-এর ফেসবুক পেইজ-এ সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারেন।