ভারতের ঝাড়খণ্ডে ‘শিশু পাচারকারী গুজবে’ একই দিনে দুইটি আলাদা ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৭ জন। ‘WhatsApp’-এ রটানো একটি গুজবকে কেন্দ্র করে পূর্ব সিংহভূমে ও সরাইকেলায় শত শত মানুষ অচেনা পথচারীদের উপর হামলা শুরু করে।
হিন্দিতে ছড়ানো এই গুজবে লেখা হয় –
“…সন্দেহভাজন শিশু পাচারকারীরা অজ্ঞান করার ঔষধ, ইনজেকশন, স্প্রে, তুলো আর ছোট তোয়ালে নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। তারা হিন্দি, বাংলা এবং মালায়লি বলতে পারে। যদি আপনার বাসার আশেপাশে অপরিচিত কাউকে দেখে থাকেন তাহলে সাথে সাথে পুলিশকে অবগত করুন কারণ সে ছেলেধরা সংঘের সদস্য হতে পারে।”
WhatsApp-এর মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেরাইকেলা-খারসাওয়ান, পূর্ব সিংভূম ও পশ্চিম সিংভূম জেলার গ্রামবাসীরা হাতে তৈরি অস্ত্র দিয়ে অজ্ঞাত পথচারীদের উপর হামলা শুরু করে।
মে ২০, বৃহস্পতিবার এমন দুইটি গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয় ৭ জন এবং ৬ জনের মত আহত অবস্থায় প্রাণ নিয়ে পালায়।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে উত্তেজিত জনগণ পুলিশের উপর আক্রমণ শুরু করে এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।[২]
পুলিশ নিহতদের কারোর সাথে কোন ‘শিশু পাচারকারী’ সংঘের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় নি। এদের ৪ জন সাধারণ গরু-ছাগল ব্যবসায়ী ছিল এবং এদের ঐ স্থানে নিয়মিত যাওয়া আসা ছিল। সন্দেহ করা হচ্ছে এই গুজবকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই চারজনকে হত্যা করা হয়। এই গুজবের মাধ্যমে এটিকে ধর্মীয় দাঙ্গায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে আরেক গোষ্ঠী।
এই ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি ফেইসবুকের মত সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে প্রচারণা করার কারণে এই সহিংসতা আরও প্রকট হচ্ছে। নিহতদের চারজন মুসলমান হওয়ায় এটিও প্রচার করা হচ্ছে যে মুসলমান হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “গ্রামের সাধারণ লোকজন গুজব ও সংবাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। ফোনে যাই শেয়ার করা হয় তাই তারা সত্য বলে বিশ্বাস করে, আর সেটির উপর ভিত্তি করেই তারা আবেগময় হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।”
https://www.facebook.com/ajplusenglish/videos/965473300260844/
নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই, ভবিষ্যতে এমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনারোধে সক্রিয় হতে হবে আমাদের সবাইকে। ঘটনাটি ভারতে হলেও বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবহারকারীদের জ্ঞান ও চিন্তা অনেকখানি একই। ইতিপূর্বে বাংলাদেশেও কেবল গুজবের উপর ভিত্তি করে প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার।
আপনি কি করতে পারেন?
- অনলাইনে কিছু শেয়ার ও বিশ্বাস করার ব্যপারে সতর্ক হউন।
- রৌহমর্ষক কিছুর খোজ পেলে ‘যাচাই’-এর মত ফ্যাক্ট-চেকিং বা ‘সত্যতা যাচাই’ করার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে সেটির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন।
- আমাদের গুজব চেনার প্রাথমিক পদ্ধতিগুলো পড়ুন ও শেয়ার করুন।
- সত্য জানলে, ভুল পোস্টটি মুছে ফেলুন এবং সঠিক তথ্য শেয়ার করুন।
- বন্ধুদের পেইজ ও গ্রুপে ইনভাইট করে আমাদের বার্তাগুলো ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করুন।
অনলাইনে চলমান বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আপনার গঠনমূলক পর্যবেক্ষন কিংবা অভিমত আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো। আমাদের পাঠাতে হবে [email protected]এই ঠিকানায়। অথবা যাচাই-এর ফেসবুক পেইজ-এ সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারেন।