অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

জুলাই ৬, ২০১৭ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের স্থান নিয়ে ইউনেস্কোর যে আপত্তি ছিল তা সংস্থাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।পোল্যান্ডের ক্র্যাকো শহরে আয়োজিত ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে এই আপত্তি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী দল সুন্দরবনের কাছে এমন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। এসব আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২২ থেকে ২৮ মার্চে ইউনেস্কো ও পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন, আইইউসিএন-এর একটি দল রামপাল পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ বলে উল্লেখ করা হয় এবং প্রকল্পটি অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। [1]

Naomi D., Mizuki M., Fanny D.. “Report on the Mission to the Sundarbans World Heritage Site, Bangladesh, from 22 to 28 March 2016”. UNESCO. (October 12, 2016).

এই প্রতিবেদনটির উপর ভিত্তি করে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম সভার পূর্বে মে ১৯, ২০১৭ তারিখে সভাটির প্রস্তাবিত খসড়া সিদ্ধান্তের (41 COM 7B. 25 – The Sundarbans) ১ম প্যারাগ্রাফে বলা হয়―[2]

(The World Heritage Committee) welcomes the State Party’s decision not to approve the Orion power plant and Phase II of the Rampal power plant, and to carry out a Strategic Environmental Assessment (SEA) for the South-West region of Bangladesh, including the property, and requests the State Party to ensure that any large-scale industrial and/or infrastructure developments (including the Rampal power plant) will not be allowed to proceed before the SEA has been completed, and to submit a copy of the SEA to the World Heritage Centre for review by IUCN, in accordance with Paragraph 172 of the Operational Guidelines, as soon as it is available;


বাংলা: (কমিটি) সরকার পক্ষের (খুলনার) অরিয়ন পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় কার্যকর না করার জন্য অভিবাদন জানাচ্ছে এবং একটা কৌশলগত পরিবেশ জরিপ (এসইএ) চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। এবং অনুরোধ জানাচ্ছে যেন সরকার পক্ষ এই এসইএ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় ধরনের কোন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং/অথবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প কার্যকর না করে এবং এসইএর সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে প্যারাগ্রাফ ১৭১ মোতাবেক তৈরিকৃত প্রতিলিপি আইউসিএনের রিভিউয়ের জন্যে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটিকে সরবরাহ করে।

৯ম প্যারাগ্রাফে বলা হয়―

…also urges it to not proceed further with implementation of the Rampal power plant in its current location;


বাংলা: …(কমিটি) সরকারকে বর্তমান অবস্থানে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কার্যক্রমে আর না আগানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

এবং ১০ম প্যারাগ্রাফে বলা হয়,

Finally requests the State Party to submit to the World Heritage Centre, by 1 February 2018, an updated report on the state of conservation of the property and the implementation of the above, for examination by the World Heritage Committee at its 42nd session in 2018, with a view to considering, in the absence of substantial progress in the implementation of the above-mentioned recommendations, the possible inscription of the property on the List of World Heritage in Danger.


বাংলা: সর্বোপরি, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ৪২তম সভায় নিরীক্ষার জন্য (কমিটি) সরকার পক্ষকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখের মধ্যে সম্পদটি (সুন্দরবন) সুরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপের অবস্থা এবং উপরে (অন্য প্যারাগ্রাফে) উল্লেখিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপর একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করার জন্য (কমিটি) অনুরোধ করছে। উপরে উল্লেখিত প্রস্তাবগুলোর যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা না গেলে সম্পদটিকে (সুন্দরবনকে) ‘বিপদগ্রস্ত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকা’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

জুলাই ৫ তারিখে এই সভায় সুন্দরবন বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করা হয়।[3] চূড়ান্ত করার আলোচনায় সিদ্ধান্তগুলোতে ছোটখাটো ভাষাগত কিছু সংশোধনী আসে। তবে তুরস্কের প্রস্তাবনায় ৯ম প্যারাগ্রাফে―

“(কমিটি) সরকারকে বর্তমান অবস্থানে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির কার্যক্রমে আর না আগানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।”

এবং ১০ম প্যারাগ্রাফের―

“উপরে উল্লেখিত প্রস্তাবগুলোর যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা না গেলে সম্পদটিকে (সুন্দরবনকে) ‘বিপদগ্রস্ত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকা’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।”

-এই দুই অংশ বাদ দেওয়া হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারকে আপডেট রিপোর্ট প্রদানের সময়সীমা বর্ধিত করে ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ করে দেওয়া হয়, যা ৪২তম সভার পরিবর্তে ৪৩তম সভায় নিরীক্ষা করা হবে।

এই লাইন দুইটি বাদ দেয়ার প্রস্তাবের পেছনে তুরস্কের যুক্তি হচ্ছে, ১) কমিটির পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুসারে Strategic Environmental Assessment (SEA) সম্পন্ন করার জন্য ও প্রদত্ত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে আরও সময় দেওয়া উচিত ২) এসেসমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে ফলাফল না জেনেই সব নির্মান কাজ বন্ধ করার দাবী যুক্তিযুক্ত নয়।

মূলত এই দুইটি লাইনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ সরকারকে চাপের মুখে রেখে এসেছিল ইউনেস্কো। কমিটির প্রস্তাবনাগুলো বাংলাদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে এবং সুন্দরবন রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের এমন আশ্বাসের উপর ভিত্তি করে, এই দুইটি সিদ্ধান্ত শিথিল হওয়ার পর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইউনেস্কোর সুনির্দিষ্ট কোন নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না। তাই আপত্তি সরাসরি প্রত্যাহার না করলেও, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি এর মাধ্যমে Strategic Environmental Assessment শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সরকার পক্ষকে তার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে।

সত্যিকার অর্থে আপত্তি প্রত্যাহার না করলেও, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ পূর্বক, সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করেছে।

সর্বশেষ হালনাগাদ:

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. Naomi D., Mizuki M., Fanny D.. "Report on the Mission to the Sundarbans World Heritage Site, Bangladesh, from 22 to 28 March 2016". UNESCO. (অক্টোবর ১২, ২০১৬). (Page 20, Recommendation R2)
  2. World Heritage Committee 41 Session. "State of conservation of properties inscribed on the World Heritage List". UNESCO. (মে ১৯, ২০১৭). (Page 55)
  3. "41st World Heritage Committee 5 July 2017 PM". UNESCO. (জুলাই ৫, ২০১৭).

মন্তব্য