অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে এই গুজবটি এক দফায় ভাইরাল হলেও এই বছরের জুন মাসে এটি আবার আলোচনায় ফিরে আসে। একাধিক ব্যক্তি তাদের প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখায় যে প্রাণ ও রাঁধুনি সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সরিষা তেল আগুনে উত্তপ্ত করা হলে তা বর্ণহীন হয়ে পড়ছে। তাদের দাবী অনুসারে এই বর্ণহীন হয়ে পড়াটা ক্যামিকেল যুক্ত ভেজাল সরিষা তেলেরই বৈশিষ্ট্য।

এই ভিডিওগুলোতে দেখানো ভেজাল সরিষা তেল সনাক্তকরণ পদ্ধতিটি গবেষকদের দ্বারা স্বীকৃত বা বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি নয়। এমনকি দাবীকৃত ভেজাল সনাক্তকরণ এই পদ্ধতিটি পৃথিবীর অন্য কোথাও ব্যবহৃত হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আগুনে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হলে তা বর্ণহীন হয়ে পড়ার ঘটনাটি যেকোনো সরিষা তেলেরই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে, যে কোন তেলের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতার মাত্রাকে ‘স্মোক পয়েন্ট’ (smoke point) বলে।[1] এই মাত্রার উপরে তেল উত্তপ্ত করা হলে সেটি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আর ধরে রাখতে পারে না এবং এর ফলে তা ধুঁয়ায় পরিণত হয়। সরিষা তেলের ক্ষেত্রে এই মাত্রাটি ২৫o ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হলে যে কোন সরিষার তেলেরই স্বাভাবিকভাবে রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হবে। যার ফলে সরিষা তেলের গন্ধ, স্বাদ ও বর্ণেও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। তেল দিয়ে দৈনন্দিন রান্নার সময় এই কারণে ব্যবহার ভেদে তাপমাত্রা ১২০-১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা উচিত।

এই ভিডিওগুলোতে দেখানো পদ্ধতিটিতে কেবল প্রাণ বা রাঁধুনি না, বরং যে কোন ভোজ্য সরিষার তেল উত্তপ্ত করা হলে সেটির ক্ষেত্রেও একই ফলাফল পরিলক্ষিত হবে।

এবিসি রেডিওতে প্রচারিত ভৌতিক ঘটনা ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘ডর’-এর উপস্থাপক, রাদবি রেজা জুন মাসে ফেইসবুকে ‘নকল সরিষার তেল’ সনাক্তকরণের এই তথাকথিত পদ্ধতিটি ব্যবহার করে রাঁধুনি সরিষার তেলের একটি ভিডিও প্রকাশ করলে তা এই বছর নতুন করে গুজবটিকে উদ্দীপ্ত করে। পরবর্তীতে একাধিক ব্যক্তিবর্গ দ্বারা সমালোচিত হলে এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের সরিষার তেল একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে ভুল প্রমাণিত হলে, তিনি ভিডিওটি মুছে ফেলেন এবং ভুল স্বীকার করে অপর একটি ভিডিও প্রকাশ করেন।

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. "Smoke point". Wikipedia.

মন্তব্য