ভাইরাল এই চেইন ম্যাসেজটি ঠিক কোন সালের কত তারিখে উৎপত্তি হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে অনুসন্ধানের পর প্রমাণ পাওয়া যায় যে “ভয়াবহ বিপদজনক মহাজাগতিক রশ্মি পৃথিবী অতিক্রম করার” সংবাদটি অন্তত ২০০৮ সাল থেকে চলে আসছে। বার্তাটিতে রাত ১২:৩০ থেকে ৩:৩০ পর্যন্ত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বলা হয়। কেননা বিশেষ এই মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic ray) পৃথিবী অতিক্রম করার ফলে এসব ডিভাইসগুলো শারীরিক ক্ষতি করতে পারে।
যেসব কারণে এই দাবীটি ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট তা হলো―
ভুল # ১: দিনের উল্লেখ
বার্তাটিতে নির্দিষ্ট দিন উল্লেখ না করে বলা হচ্ছে Tonight অর্থ্যাৎ, ‘আজ রাত’। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোন রাতেই এমনটি ঘটেছে বলে জানা যায় নি। অথচ আজ অবধি প্রায় প্রতিদিনই ম্যাসেজটি বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে আদানপ্রদান করা হচ্ছে। তাই ‘আজ রাতের’ কার্যত কোন অর্থ নেই।
ভুল # ২: সময়ের উল্লেখ
বার্তাটিতে সময়ের উল্লেখ করা আছে ১২:৩০ থেকে ৩:৩০। অথচ ম্যাসেজটি পাঠানো হচ্ছে পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের কাছেই। এবার একটা যৌক্তিক প্রশ্নে আসি। ধরুন আমাদের বাংলাদেশের সময়ের পরিমাপ হচ্ছে UTC+6 ঘণ্টা। আবার আমাদের কিছুটা পাশের দেশ মালয়েশিয়ার সময়ের পরিমাপ হচ্ছে UTC+8 ঘণ্টা। ওদিকে আবার খোদ অ্যামেরিকাতেই টাইমজোন আছে মোট ৯ টা। তাই রাত ১২টা মানে কোন দেশের রাত ১২টা সেটি এখানে স্পষ্ট নয়। সুতরাং, এই সময়েরও কোন ভিত্তি নেই।
ভুল # ৩: সিঙ্গাপুর টিভির বরাত
এখানে শুধু বলা হচ্ছে সংবাদটি সিঙ্গাপুর টিভি সম্প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু সিঙ্গাপুর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এই সংবাদটি কোথা থেকে পেয়েছে তার কোন সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও সিঙ্গাপুর টিভি নামক কোন চ্যানেলের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না, প্রচারিত রিপোর্টটি খুঁজে পাওয়া তো দূরের কথা।
ভুল # ৪: তথ্যের উৎস
ম্যাসেজে বলা হচ্ছে যে সংবাদটি বিশ্বাস না হলে গুগল এবং নাসা, বিবিসি নিউজে খোঁজ করে দেখতে। প্রথমত, গুগল কোন সংবাদ মাধ্যম নয়, এটি কেবল একটি সার্চ ইঞ্জিন যা অন্য ওয়েবসাইটগুলোতে প্রকাশিত তথ্য খুঁজতে সহায়তা করে। এখানে গুগল সার্চের মাধ্যমে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায় তা বিশ্বাসযোগ্য ভাবার কারণ নেই। এছাড়াও নাসা অথবা বিবিসিতেও এমন কোন সংবাদ প্রচার করা হয় নি কখনো।
মহাজাগতিক রশ্মি – কি এবং ঠিক কতটুকু ক্ষতিকর?
সুপারনোভা, অর্থাৎ তারকারাজি অথবা গ্রহ-উপগ্রহের মাঝে বিস্ফোরণের কারণে মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic ray) সৃষ্টি হয় এবং তা সমগ্র মহাজগতে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই সেটি আমাদের পৃথিবীর দিকেও ধাবিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সাথে সংঘর্ষে এটি দুর্বল হয়ে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী “সেকেন্ডারি পার্টিকেল” এ রূপান্তরিত হয়, যা কখনো কখনো আংশিকভাবে পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে থাকে।[1]
এসব মহাজাগতিক রশ্মি প্রতিনিয়তই আমাদের শরীরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় যার সুনির্দিষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব আজও পর্যন্ত সনাক্ত করা যায় নি।[2] তবে ধারণা করা হয় যে এসব রশ্মির রেডিয়েশন আমাদের শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবার ফলে আমাদের খুব সূক্ষ্মভাবে জেনেটিক মিউটেশন ঘটছে। যেটির প্রভাব হয়তো কয়েকশ বছর পরে আমাদের মধ্যে দেখা যেতে পারে।[3] তবে এই মহাজাগতিক রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব ইলেকট্রনিক কোন ডিভাইসের উপর পড়ে এমন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বরং “মহাজাগতিক রশ্মি আমাদের কোন ক্ষতি করে কিনা” – সেটা গুগলে খোজ করা হলে যতগুলো ফলাফল আসে তার মধ্যে অন্তত অধিকাংশই দাবী করে যে মহাজাগতিক রশ্মি আমাদের ক্ষতি করবে, বা আমাদের ফোনের মাধ্যমে ক্ষতি করতে পারে – এই দাবীগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।