অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

সেপ্টেম্বর ১১ তারিখ রাতে “নোবেল শান্তি পুরস্কার: শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব” শিরোনামে সংবাদটি ঢাকা ইনসাইডার নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। এবং সংবাদটির উপর ভিত্তি করে আরও একাধিক অভিনন্দন পোস্ট তৈরি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও সমর্থক। বলার অপেক্ষা রাখে না, যাচাই-বাছাই করা ছাড়া প্রচারিত এই সংবাদটি ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ বানোয়াট।

সংবাদটিতে বলা হয়, অক্সফোর্ড, কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড এবং অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন অধ্যক্ষরা সাম্প্রতিক সময় রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের অনন্য ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া আরও বলা হয়, উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অধ্যক্ষরা ‘নোবেল শান্তিতে পুরস্কার মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ভূমিকা রাখেন’।

রিপোর্টে উল্লেখ করা ৭ জন অধ্যক্ষের পরিচয়ের সত্যতা ‘প্রায়’ মিললেও এদের কেউই শেখ হাসিনা, রোহিঙ্গা কিংবা বাংলাদেশ বিষয়ক কোন মন্তব্য কখনো করেছেন কিনা এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। এছাড়াও এদের কেউই ‘নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি’, যে কমিটি থেকে মূলত এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে, সেটির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।[1] নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির কাছে ৮ ধরণের ক্যাটাগরির ব্যক্তি নোবেল পিস প্রাইজের জন্য মনোনয়ন দিতে পারে।[2] বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষরাও অন্যতম। তবে উল্লেখিত ৮ জন ব্যক্তি, লিজ কারমাইকেল (অক্সফোর্ড), অ্যান্ড্রু গোসলার (অক্সফোর্ড), অলডো সিভিকো (কলাম্বিয়া), দীপালী মুখোপাধ্যায় (কলাম্বিয়া), জুডিথ ম্যাটলফ (কলাম্বিয়া), ডেভিড এন হেম্পটন (হার্ভার্ড), হেনরিক উরডাল (অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল) – এরা কেউই কিমিটির সাথে বিশেষভাবে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

প্রদত্ত তথ্যে এসব শিক্ষাবিদদের নাম ও সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটির নাম ‘প্রায়’ সঠিক থাকলেও উল্লেখিত বিভাগ বা ইন্সটিটিউটের নামগুলো ভুল দেওয়া হয়েছে। মূলত গুগলে “Peace and Conflict Studies”-এর সাথে এসব ভার্সিটির নাম জুড়ে দিয়ে সার্চ করে প্রাপ্ত প্রথম দুই রেজাল্টের মধ্য থেকেই এসব এসব ব্যক্তিদের নাম নির্বাচন করা হয়েছে। আর এই কারণে বানোয়ট রিপোর্টটির সৃষ্টিকারী এখানে হেনরিক উরডালের প্রতিষ্ঠানের নাম ভুল করে ফেলে। কেননা পেইজটিতে অষ্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট -এর নাম পাশাপাশি ছিলো এবং প্রতিষ্ঠান দুইটি স্বতন্ত্র। হেনরিক উরডাল ‘Peace Research Institute Oslo’-তে কর্মরত। অষ্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নয়।

গত কিছুদিন যাবত শেখ হাসিনার পক্ষে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ‘নোবেল পুরস্কার’-এর দাবীকে কেন্দ্র করেই এই বানোয়াট রিপোর্টটি করা হয়ে থাকতে পারে। খবরটি ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরে অন্যান্য নিউজ পোর্টালগুলো হুবহু কপি করে প্রকাশ করে।

আমাদের কথা

দেশে রোহিঙ্গা বিষয়ে সৃষ্ট সংকটে এমন বানোয়াট খবর প্রকাশ কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বিশেষত খুবই সতর্কতার সাথে এরুপ প্রায় বিশ্বাসযোগ্য করে রিপোর্ট তৈরি করা হতাশাজনক। এসব বানোয়াট খবরের ফলে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং সেই বিভ্রান্তিগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে নেয় দুর্বৃত্তরা। আমাদের সকলেরই তথ্য সম্প্রচারে আরও দায়িত্বশীল আচরণ ও সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. Nobel Media. "The Norwegian Nobel Committee 2017". Nobelprize.org. (সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭).
  2. Nobel Media. "Nominations for the 2017 Nobel Peace Prize". Nobelprize.org. (সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭).

মন্তব্য

প্রচারিত মাধ্যম

কোন মিডিয়া অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি? রিপোর্ট করুন