নভেম্বর ৮ তারিখের দিকে প্রকাশিত একটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনপ্রিয় ড্রিংকিং মিনারেল ওয়াটার, মাম পানির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করছেন একজন ব্যক্তি। সেখানে দেখা যায় যে একটি যন্ত্রের মাথা দুইটি প্লাস্টিক গ্লাসের মাঝে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা হলে গ্লাসে থাকা মাম বোতলের স্বচ্ছ পানি কিছুক্ষণের মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায় এবং মাটি রঙের সরের মত একটি স্তর পানির উপরে পড়ে যায়। ভিডিওটির পরীক্ষকের মতে এই স্তরটি পানিতে থাকা ময়লা বা জীবাণু নির্দেশ করে।
ভিডিওটিতে বলা না হলেও পানির বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের এই তথাকথিত পদ্ধতিটিকে ইলেক্ট্রোলাইসিস (Electrolysis) বলে এবং ব্যবহৃত যন্ত্রটিকে প্রিসিপিট্যাটর (Precipitator) বা ইলেক্ট্রোলাইজার (Electrolizer) বলে। ইলেক্ট্রোলাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে পানিকে বিদ্যুতায়িত করে পানির মৌলিক উপাদান অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনকে বিভক্ত করা হয়। যার ফলে ইলেক্ট্রোলাইজারের ধনাত্মক চার্জের (Anode) কন্ডাক্টর (Electrode) প্রান্তে অক্সিজেন এবং ঋণাত্মক চার্জের (Cathode) প্রান্তে হাইড্রোজেন জমা হয়।
মিনারেলযুক্ত খাবার পানিতে সাধারণত ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ফ্লোরাইড, ক্লোরাইড, ক্যাডমিয়াম, লেড, ম্যাঙ্গানিজ, নাইট্রেট ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান নির্দিষ্ট মাত্রায় মিশ্রিত থাকে যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। ইলেক্ট্রোলাইসিস পদ্ধতি ব্যবহার করে মিনারেলযুক্ত পানি বিশ্লেষণ করা হলে পানি ভেঙ্গে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন আলাদা হয়ে যায় এবং পানিতে থাকা বিভিন্ন মিনারেলগুলো আলাদা হয়ে জমাট বাঁধে।
পানির এই ধর্মকে অপব্যবহার করে অনেক সময় ওয়াটার পিউরিফাইয়ার কোম্পানিগুলো ইলেক্ট্রোলাইসিস পদ্ধতিতে মিনারেল পানিকে ‘বিষাক্ত’ ও ‘জীবানুযুক্ত’ বলে তুলে ধরার চেষ্টা করে। পিউরিফাইয়ারের মাধ্যমে পানি ফিল্টার করে ইলেক্ট্রোলাইসিস করা হলে তা তুলনামূলক কম অন্ধকার বর্ণের হওয়াটা খুব স্বাভাবিক, যেহেতু সেখানে মিনারেলের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকে। নিচের ভিডিওটিতে (ইংরেজি) এই প্রক্রিয়াটি বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে―
Position Not Set‘সাধু পানি’ অর্থাৎ অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন ছাড়া অন্য কোন প্রকার উপাদান বা মিনারেল একেবারেই নেই বা থাকলেও খুবই কম মাত্রায় রয়েছে, এমন পানি ইলোক্ট্রোলাইসি করতে উচ্চমাত্রার শক্তি প্রয়োগ করতে হয় এবং প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সময়সাধ্য। ফলে সাধু পানিতে কম শক্তির ইলেক্ট্রোলাইজার ব্যবহার করা হলে সেখানে বিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া খুব কম মাত্রায় পরিলক্ষিত হবে এবং প্রায় শূন্য পরিমাণ মিনারেল থাকায় পানির রং পরিবর্তন কম দৃশ্যমান হবে। তাই সাধু পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট (যেমন লবণ, এসিড ইত্যাদি) ব্যবহার করে ইলেক্ট্রোলাইসিস করা হয়ে থাকে।
তবে এখানে উল্লেখ্য, বেশি মাত্রায় মিনারেলের উপস্থিতি থাকা মানেই পানিটি বেশী উপকারী তা নয়। এসব মিনারেলের মিশ্রণ নির্দিষ্ট হারে পানিতে থাকা বাঞ্ছনীয়। মাত্রাতিরিক্ত কোন মিনারেল গ্রহণ করা হলে তা শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।