এই গুজবটির সূত্রপাত হয় অক্টোবর মাসে প্রচারিত “নভেম্বর ১৯ তারিখ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে” – এমন একটি গুজব থেকে। Nibiru Cataclysm বিশ্বাসীদের মতে প্ল্যানেট এক্স (Planet X) বা নিবরু (Nibru) নামক একটি গ্রহের সাথে সংঘর্ষে পৃথিবীর শেষদিন (Doomsday) ঘটবে এবং মানব সভ্যতার চির পরিসমাপ্তি ঘটবে। পূর্বে সেপ্টেম্বর মাসের কথা উল্লেখের পর, “নভেম্বর ১৯ তারিখে ‘নিবরু’ পৃথিবীতে আঘাত হানবে” তারা এমন খবর ছড়ালে অনেক তথাকথিত সংবাদ মাধ্যম সেটিকে নিয়ে সংবাদ তৈরি করে এবং এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ইউটিউবেও তৈরি করা হয় একাধিক ভিডিও। অতীতেও এই ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকরা এই ধরণের একাধিক ভবিষৎবাণী প্রদান করলেও নিবরু নামক এই গ্রহের কোন অস্তিত্ব কখনো পাওয়া যায় নি।
ভারতে নভেম্বরের শুরু থেকেই ১৯ তারিখে পৃথিবী ধ্বংসের গুজব ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। অবশেষে ১৯ তারিখ পৃথিবী ধ্বংস না হলে, এই বিষয়ে মানুষের ব্যাপক কৌতূহলের প্রেক্ষিতে ভারতীয় মিডিয়াতে প্রচার শুরু হয় “২০৩৬ সালে ‘অ্যাপোফিস’ নামক একটি গ্রহাণু আঘাত হানবার” আরেকটি গুজব। যেই গুজবটি ২০১৩ সালেই নাসা নাকচ করে দেয়।
কিছুটা বানোয়াট তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রচারিত এই প্রতিবেদন, নভেম্বর ২০ তারিখে, কলকাতা ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ‘সংবাদ প্রতিদিন’ বাংলায় ভাষান্তর করে “গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষেই ধ্বংস হবে মানব সভ্যতা! এবার দাবি নাসারই” – শিরোনামে প্রকাশ করে। দৈনিক কালের কণ্ঠ ঐ প্রতিবেদনটিকে তথ্যসূত্র দেখিয়ে অনলাইনে দুটি পৃথক সংবাদ এবং পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাপায়। ২১ তারিখে ব্যাপক ভাইরাল হওয়ার পর, ঐ প্রতিবেদনগুলো হুবহু নকল করে প্রচার শুরু করে অন্যান্য বাংলাদেশী নিউজপোর্টাল। বাংলাদেশ প্রতিদিনও সংবাদটি তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করে।
অ্যাপোফিস কি?
অ্যাপোফিস (Apophis) হলো পৃথিবীর নিকটবর্তী একটি গ্রহাণু। এর পূর্ণ নাম 99942 Apophis। এই গ্রহাণুটিকে ১৯ জুন ২০০৪ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন Roy A. Tucker, David J. Tholen, এবং Fabrizio Bernardi নামক তিনজন জ্যোতির্বিদ।[1] এর ব্যাস পরিমাপ করা হয়েছে ৩৭০ মিটার।[2]
আবিষ্কারের সাথে সাথেই Apophis গ্রহাণুটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। কারণ সে সময়ের প্রাপ্ত উপাত্ত হিসাব করে দেখা যায় ২০২৯ সালে এই গ্রহাণুটির পৃথিবীকে আঘাত করার একটি ক্ষুদ্র (২ দশমিক ৭ শতাংশ) সম্ভাবনা আছে। পরবর্তীতে গ্রহাণুটিকে আরো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এটি ২০২৯ সালে পৃথিবীকে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা নাই। তবে সেই বছর এটি পৃথিবীর খুবই কাছ দিয়ে যাবে, যা ইতিহাসে বিরল। এমন ঘটনা প্রতি ৮০০ বছরে একবার ঘটতে পারে।[3]
২০২৯ সাল বিপদমুক্ত এটা জানা গেলেও ২০৩৬ সালেও কিছুটা বিপদের আভাস ছিলো; তবে সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি ২০১৩ সালে নাসা এক ঘোষণায় জানিয়ে দেয় ২০৩৬ সালেও 99942 Apophis এর কারণে পৃথিবীর উপর কোনো বিপদের সম্ভাবনা নাই।[4][5]
গ্রহাণুর পৃথিবীকে আঘাত করার ঘটনা খুবই বিরল
পৃথিবীকে আঘাত করে বৈশ্বিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে সক্ষম – এমন গ্রহাণু খুবই বিরল। এ ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি কারী গ্রহাণু গুলো ১ কিমি বা তার বেশি ব্যাস এর হয়। এ ধরনের গ্রহাণু গড়ে পৃথিবীকে ১ লক্ষ বছরে একবার আঘাত করতে পারে।[6]
যদি দেখা যায় যে কোনো মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে তাহলে কী করা হবে?
যদি জ্যোতির্বিদরা এমন কোনো বস্তু খুঁজে পান, তাহলে তাদের কাছে যথেষ্ট সময় থাকবে। যে সময়ে তারা নির্ভুলভাবে এই বস্তুটির কক্ষপথ এর হিসাব করতে পারবেন এবং পরিকল্পনা করতে পারবেন যাতে করে একে এর বর্তমান কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। এতে সাধারণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে নাসা।[6]