অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

নভেম্বর ২০, ২০১৭ তারিখে বাংলা ইনসাইডার নামক নিউজ পোর্টালে “শেখ হাসিনা বিশ্বের ৩য় সৎ সরকার প্রধান” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয় ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামক বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে মাত্র ১৭ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছেন যাঁরা শতকরা ৫০ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ৫ টি প্রশ্নে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৭ নম্বর পেয়ে এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে অধিকার করেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা ইনসাইডারে প্রকাশিত সংবাদটি প্রায় দেড় লক্ষ বারের কাছাকাছি শেয়ার, লাইক ও কমেন্ট পায়।

সংবাদটি বাংলা ইনসাইডারে প্রকাশ হলে অন্যান্য নিউজ পোর্টালগুলোও হুবহু নকল করে সংবাদ প্রকাশ করে। এমন কি খবরটি প্রকাশের দুইদিন পর, জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ তাদের অনলাইন নিউজ পোর্টালেও এই খবরটি প্রকাশ করে।

‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামক আলোচ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি একটি অস্তিত্বহীন কাল্পনিক সংগঠন। এছাড়াও ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের উপর এমন কোন গবেষণা বা জরিপের কোন সংবাদ কোন নির্ভরযোগ্য জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাওয়া যায় না।

খবরটিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ‘বাংলা ইনসাইডার’ অন্য বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের নামক উল্লেখ করে। তাদের প্রত্যেককে ‘কাল্পনিক’ স্কোরও প্রদান করে। এছাড়াও, বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রথম দাবী না করে, তার স্থান তৃতীয় রেখে খবরটিকে নির্ভরযোগ্য করার চেষ্টাও পরিলক্ষিত করা যায়।

‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’-এর নাম ব্যবহার করে আরেকটি বানোয়াট খবর প্রচার

বাংলা ইনসাইডার এই সংবাদ প্রকাশের এক সপ্তাহ আগে, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখে একই কাল্পনিক প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে “শেখ হাসিনা: বিশ্বে চতুর্থ কর্মঠ সরকারপ্রধান” শিরোনামে আরেকটি বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়―

“পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্সের গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে পরিশ্রমী রাষ্ট্রপ্রধান হলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দ্বিতীয় পরিশ্রমী হিসেবে বিবেচনা তারা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে। পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স এর বিবেচনায় বিশ্বে তৃতীয় পরিশ্রমী রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান হলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বিশ্বের চতুর্থ কর্মঠ সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর পঞ্চম পরিশ্রমী সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।”

জাতীয় সংসদে বানোয়াট এই সংবাদের উল্লেখ

দশম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে এক সম্পূরক প্রশ্নে জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম এই কাল্পনিক দু’টি গবেষণার বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। যেখানে প্রশ্নকর্তা বলে, “ব্যক্তিগত না হলেও সরকারের কিছু দুর্নীতির কারণে প্রধানমন্ত্রী তালিকার আরো উপরে কথার কথা থাকলেও তৃতীয় হয়েছেন”।[1] এমনকি প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই গবেষণা দুটিকে সত্য বলে বিশ্বাস করে বলেন―

“আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই গবেষণায় যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের দেশে জনসংখ্যা কত? আর আমার দেশের জনসংখ্যা কত? এটা যদি তারা একটু তুলনা করতেন তাহলে হয়তো হিসেবটা পাল্টে যেত। কারণ আমাদের মত প্রতিকুল অবস্থার মধ্যদিয়ে তাদের চলতে হয়নি। কেউ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়নি বা তাদের কাউকে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রেখে হত্যার চেষ্টাও হয়নি।”

ইতিপূর্বে একইভাবে বাংলা ইনসাইডার শেখ হাসিনার নোবেল শান্তি পুরস্কার সম্পর্কিত একাধিক বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে।