অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

পাকিস্তান ভিত্তিক উর্দু নিউজ চ্যানেল ‘আব তাক’ (Abbtakk) সর্বপ্রথম এই ধরনের একটি খবর ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করে। যাতে বলা হয়, ‘চাইনিজ ভাষা পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এটি গৃহীত হয়েছে।’ পরবর্তীতে খবরটি ইন্ডিয়া টুডে, ফিনেন্সিয়াল এক্সপ্রেস সহ ভারতের প্রধান কয়েকটি মিডিয়া ফলাওভাবে প্রচার করলে এই গুজবটি আরো বিশ্বাসযোগ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষ সংবাদ মাধ্যম যেমন বাংলানিউজ২৪, সময় নিউজ, কালের কণ্ঠযুগান্তর এই বানোয়াট খবরটি কোনরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই সংবাদ আকারে প্রকাশ করে।

‘আব তাক’ তাদের সংবাদে ফেব্রুয়ারি ১৯ তারিখে জাতীয় পার্লামেন্টের ২৭৩তম অধিবেশনের একটি বিলের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করে। ঐ বিলটিতে বলা হয়[1]

“This house recommends that, in light of the growing affiliation between Pakistan and China under CPEC, courses of the official Chinese language may immediately be made accessible to all current and prospective Pakistani CPEC human resources, so as to overcome any costly communication barrier.”

দেশি ভাষা: বঞ্চিত পাকিস্তানের অফিসিয়াল ভাষা মান্দারিন!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮ তারিখে “দেশি ভাষা বঞ্চিত: পাকিস্তানের অফিসিয়াল ভাষা মান্দারিন!” শিরোনামে খবর প্রকাশ করে।

অর্থাৎ, যেসকল ব্যক্তি চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের সাথে জড়িত তাদের জন্য ‘অফিশিয়াল চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স’ শুরু করার প্রস্তাবনা অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ আলোচ্য সংবাদ সংস্থাটি এই প্রস্তাবনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ব্রেকিং নিউজ প্রকাশ করলে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। স্বভাবতই, রাজনৈতিক কারণে ভারতীয় সংবাদ সংস্থাগুলোও চীনের সাথে পাকিস্তানের সখ্যতা তুলে ধরার জন্য খবরটি প্রচার করে। আবার ইন্ডিয়া টুডে ‘সরকারি স্কুলে চীনা ভাষা শিখানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়ে’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।

ভুল খবরটির ব্যাপকতার কারণে, পাকিস্তান সিনেট পরবর্তী অধিবেশনে ফেব্রুয়ারি ২০ তারিখের সভার শুরুতে এই বিষয়টি পরিষ্কার করে।[2]

পাকিস্তানের অফিশিয়াল ভাষা

পাকিস্তানে মোট ৭২টির মত ভাষা আছে।[3] যদিও পাকিস্তান সরকার জাতীয় শুমারিতে আলাদাভাবে শুধুমাত্র ৯টি ভাষাকে গণ্য করে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। তবে অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে সেদেশে প্রধানত ইংরেজি স্বীকৃত। দেশটির ৪৮% মানুষ প্রথম ভাষা হিসেবে পাঞ্জাবিতে কথা বললেও এই ভাষাটি, ‘পাশতো (১৫.৪২%)’, ‘সিন্ধি(১৪.৫%)’ ‘বালোচি (৪%)’ ইত্যাদি আঞ্চলিক ভাষাসহ, দেশটির জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃত না।[4][5] অথচ দেশটির একমাত্র স্বীকৃত জাতীয় ভাষা উর্দু মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮% মানুষের প্রথম ভাষা।

পাকিস্তান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশটির একাধিক আঞ্চলিক ভাষা বিলুপ্ত প্রায়। অপরদিকে কর্মক্ষেত্রে সুযোগসুবিধা পাওয়ার সুবাদে সেদেশের শিক্ষার্থীরা ম্যান্ডারিন (Mandarin) ভাষা শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। [6] আঞ্চলিক ভাষার প্রতি পাকিস্তানের এরূপ মনোভাবই আলোচ্য ভুয়া খবরটিকে মানুষের কাছে আরো বিশ্বাসযোগ্য করেছে।

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. "Daily Journal - 273rd Session". Senate of Pakistan. (ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮).
  2. Abdullah Niazi. "Senate snubs Indian media’s claims that ‘Chinese is Pakistan’s third official language’". Pakistan Today. (ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮).
  3. "Mother and the mother tongue". Dawn. (ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৭).
  4. "Languages of Pakistan". Wikipedia.
  5. "Population by Mother Tongue". Pakistan Bureau of Statistics.
  6. Umar Bacha. "More students in Pakistan are learning Chinese today than ever before". Dawn. (মে ২২, ২০১৭).

মন্তব্য

প্রচারিত মাধ্যম

কোন মিডিয়া অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি? রিপোর্ট করুন