বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ‘ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স সামিট’-এ অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ৪ দিনের সরকারী সফরে ভারতে যান। এই সফরের অংশ হিসেবে, গত বৃহস্পতিবার, মার্চ ৮ তারিখে, তিনি আসাম রাজ্যে পৌঁছান এবং ‘ভিভান্তা বাই তাজ’ ফাইভ স্টার হোটেলে উঠেন। সেখানে তিনি পৃথকভাবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সারবানান্দা সানোয়াল ও গভর্নর জগদীশ মুখীর সাথে সৌজন্যমূলক সাক্ষাত করেন।[1]
ঘটনার দুইদিন পর, মার্চ ১০ তারিখ থেকে এই সাক্ষাতের দুটি ছবি ব্যবহার করে একটি গল্প প্রচার করা হয় ফেসবুকে, যেখানে বলা হয়―
ভারতের একজন মূখ্যমন্ত্রী পদমর্যাদায় বাংলাদেশের মন্ত্রীর সমতুল্য।ছবিটিতে খেয়াল করে দেখুন একজন মূখ্যমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন আমাদের রাষ্ট্রপতি।
আসামের হোটেল ভিয়াভন্ত বাই তাজে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল জন্য ১০ মিনিট অপেক্ষা করে তারপর সাক্ষাত পেয়েছেন আবদুল হামীদ।
একটি দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে অন্য একটি দেশের রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করা বা অপেক্ষা করিয়ে রাখা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত কাজ।
কিন্তু আমরা আমাদের দেশের মেরুদন্ড ভারতের কাছে এমন ভাবে বর্গা দিয়েছি যে, ভারতের আসাম রাজ্যের একজন মূখ্যমন্ত্রী আমাদের রাষ্ট্রপতি কে শিষ্টাচার দেখানোর মত যোগ্য মনে করে না।
বাঁশেরকেল্লাসহ সোশ্যাল মিডিয়ার আরও কিছু বেনামী পেইজ এবং দৈনিক ইনকিলাব, আমার দেশ, বাংলামেইল৭১ সহ আরও কিছু নিউজ পোর্টাল থেকে হুবহু একই বিবরণে এই সংবাদটি প্রচার করা হয়।

ছবি দুটির একটিতে দেখা যায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আরও কিছু ব্যক্তিবর্গসহ বসে আছেন এবং তার পাশের চেয়ারটি শূন্য। অপর ছবিতে দেখা যায় তিনি আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে করমর্দন করছেন।

দৈনিক ইনকিলাব এই ভুল তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন করে, যার শিরোনাম “‘মহামান্য’ আমরা আর কত নিচে নামব?
প্রচারিত ছবিগুলোতে দেখা যায় ‘প্রতিদিন Time’ নামক ভারতীয় একটি নিউজপোর্টালের জলছাপ। অনুসন্ধান করে নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেইজে পাওয়া যায় মূল ছবিগুলো, যা এসব ফেসবুক পোস্টে ব্যবহার করা হয়েছিলো। সেখানে দেখা যায় মূলত ২টি নয়, ৩টি ছবি।[2]
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ‘তথাকথিত’ অপেক্ষা করার ছবিটি এই ৩টি ছবির মাঝখানে পাওয়া যায় এবং অতিরিক্ত আরেকটি ছবিতে দেখা যায় তিনি আসামের গভর্নরের সাথে সৌজন্য বিনিময় করছেন। গল্পে ব্যবহৃত হলেও, ‘প্রতিদিন টাইমের’ ছবিগুলোর বিবরণে মুখ্যমন্ত্রীর এমন ‘১০ মিনিট দেরী করে উপস্থিত হওয়ার’ কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এই ভিত্তিহীন গল্পটি কেবল কপি-পেস্ট করে প্রচার করা ভাইরাল সংবাদগুলোতেই পাওয়া যায়।

প্রতিদিন টাইমের ফেসবুক পেইজ থেকে।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ‘তথাকথিত’ অপেক্ষা করার ছবিটি মূলত আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও গভর্নরের সাথে একই স্থানে পৃথক দুটি সাক্ষাতের মধ্যবর্তী সময়ে তোলা। ছবিগুলো অনুক্রম বদলীয়ে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল ব্যাখ্যাসহ প্রচার করা হয়।