২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন’ (ওআইসি) একটি বিশেষ সম্মেলনের ডাক দেয়। সেই মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের মাধ্যমে জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতিদান করে। এই স্বীকৃতিদানকে কেন্দ্র করে ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে তুরস্কে ওআইসি’র এই বিশেষ সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়।
এই সম্মেলনের প্রাক্বালে, ১২ তারিখ, তুরস্ক ভিত্তিক কট্টর ডানপন্থী সংবাদ মাধ্যম, ইয়েনি সাফাক, ‘What if a Muslim army was established against Israel?’ (বাংলা: ইজরাইলের বিরুদ্ধে একটি মুসলিম আর্মি গঠন করলে কেমন হতো?), এই শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।[1] এই সম্পাদকীয়তে ইজরাইল ও ওআইসির ৫৭ দেশের সামরিক শক্তির তুলনা করা হয় এবং সদস্য দেশগুলোর একটি সম্মেলিত সেনাবাহিনী গঠনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়। তবে ওআইসির সেই সম্মেলনে এমন কোন সামরিক বাহিনী গঠনের ব্যাপারে আলোচনা হয়নি।
সম্পাদকীয় প্রকাশের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর, মার্চ ৭ তারিখে The Middle East Media Research Institute (MEMRI) তাদের ওয়েবসাইটে ‘Turkish Newspaper Close To President Erdogan Calls To Form Joint Islamic Army To Fight Israel’ (বাংলা: ইজরাইলকে প্রতিরোধ করতে যুক্ত ইসলামিক সেনাবাহিনী গঠনের জন্য প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘনিষ্ঠ তুর্কি পত্রিকার আহ্বান) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।[2] এই প্রতিবেদন প্রকাশের মার্চ মাস জুড়ে একাধিক মিডিয়া ‘Turkey plans to unite 57 nations to form Army of Islam’ (বাংলা: ৫৭টি দেশকে একত্রিত করে ইসলামের আর্মি গঠনের পরিকল্পনা করছে তুরস্ক) শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। এছাড়াও পশ্চিমা মিডিয়া এটিকে সমালোচনা করেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘Army of Islam’ নামটিও এসব মিডিয়ার প্রদত্ত নাম।
মার্চ ২৪ তারিখে এটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। যার ফলশ্রুতি বাংলাদেশী নিউজপোর্টাল Insaf24.com সংবাদটি অনুবাদ করে খবরটি প্রচার করে। সংবাদটি ৯০ হাজারের উপর শেয়ার হয়ে ভাইরাল হলে, সেটি কপি-পেস্ট করে সামান্য এডিট করে প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, আরটিভি অনলাইন, ইত্তেফাক, নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব এর মত পত্রিকাসহ অনেক নিউজ পোর্টাল।
এমন কোন পরিকল্পনা তুরস্ক করার কোন অফিশিয়াল বক্তব্য তুরস্ক সরকার কিংবা স্বয়ং এরদোগান নিজে দেননি। এটি পত্রিকাটির নিজস্ব চিন্তা মাত্র। এছাড়াও ৫৭টি দেশের নিজস্ব সম্মতি ছাড়া কোন একটি নির্দিষ্ট দেশ ওআইসির মাধ্যমে সেনা গঠন করার এখতিয়ার রাখে না। এটি কিছু মিডিয়ার এরদোগানকে মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে তুলে ধরার চলমান প্রচেষ্টা মাত্র। যার প্রভাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মত দেশগুলোর নির্দিষ্ট কিছু মিডিয়া ক্রমাগত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের জয়জয়কার ও মহিমাকীর্তন করে প্রকাশ করে যাচ্ছে অসংখ্য বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ।