সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর বরাত দিয়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন সহ বাংলাদেশের প্রধান সকল গণমাধ্যম, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট’ (আইআরআই)-এর ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের একটি জনমত জরিপ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের সমর্থন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্ক্রিনশট: কিছু গণমাধ্যম তাদের নিজস্ব পেইজ থেকে ফেসবুকে ‘স্পন্সর্ড’ পোস্টের মাধ্যমে রিপোর্টটি প্রচার করে।
জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৬৬ ভাগ মানুষের কাছে শেখ হাসিনা জনপ্রিয় ও ৬৪ ভাগ মানুষ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের উপর আস্থা রাখে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ৬২ ভাগ মানুষ মনে করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সঠিক পথে এগোচ্ছে এবং ৬৯ ভাগ বাংলাদেশের বর্তমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সন্তুষ্ট।
প্রতিবেদনে দাবী করা হয়, আইআরআই এর জরিপটি এই বছর এপ্রিল ১০ থেকে ২১ মে এর মধ্যবর্তী সময়ে চালানো হয় এবং আগস্ট ৩০ তারিখে এটি প্রকাশ করা হয়। জরিপের প্রতিবেদনটির কপি সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে বাসস হাতে পায় বলে উল্লেখ করা হয়।
আইআরআই কর্তৃক এমন একটি জরিপ প্রকাশের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে, তবে বাসস কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যা সঠিক নয়।[1]
জরিপের সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি
বাসসের বরাতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনগুলো সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে থেকে প্রচারিত হওয়ার পর থেকে ৬ তারিখ অবধি এমন জরিপের অস্তিত্ব ‘আইআরআই’ এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কথিত জরিপটির সত্যতার ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
‘যাচাই’ বিষয়টি নিশ্চিত করতে, আইআরআই কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে, সেপ্টেম্বর ৬ তারিখে আইআরআই কর্তৃপক্ষ প্রত্যুত্তরে আমাদের এই জরিপের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং রিপোর্টের কপি প্রদান করে। পাশাপাশি এই জনমত জরিপ সংক্রান্ত রিপোর্টটি তারা তাদের ওয়েবসাইটেও আপলোড করে৷[2]
এছাড়াও বাসস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে-
“আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনসাইট অ্যান্ড সার্ভের এই গবেষণা প্রতিবেদন গত ৩০ আগস্ট প্রকাশ করা হয়েছে।”
অথচ ‘সেন্টার ফর ইনসাইট অ্যান্ড সার্ভে’ নামক কোন গবেষণা সংস্থার অস্তিত্ব নেই৷ সঠিক নামটি হবে, ‘সেন্টার ফর ইনসাইটস অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ’ যা মূলত কোন গবেষণা সংস্থা না, বরং আইআরআই এর একটি প্রোজেক্টের নাম মাত্র৷
১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই)’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।[3] মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউএসএইড, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটিশ ও ক্যানাডা সরকারসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এই সংস্থার পার্টনার হিসেবে কাজ করছে।[4] আইআরআই প্রায় প্রতি বছরই ‘সেন্টার ফর ইনসাইটস অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ’ প্রোজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের জনমত জরিপ করে থাকে। উল্লেখ্য, আইআরআই এর জরিপ পূর্বেও সরকার সমর্থিত পক্ষ দ্বারা একাধিকবার উদ্ধৃত হয়েছে।
https://www.facebook.com/sajeeb.a.wazed/posts/1221663071303447
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ
বাসস তাদের প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য ‘বৃদ্ধি’ পেয়েছে বললেও ২০১৭ সালের জরিপের তুলনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন ‘কমেছে’ প্রায় ১৭ ভাগ। যা গত বছর ৮৩% হলেও এই বছর কমে হয়েছে ৬৬%।
এছাড়াও সরকারের কার্যক্রমের প্রতি মানুষের সমর্থন ১৫% কমে এই বছর হয়েছে ৬৪%, যা গত বছর ৭৯% ছিলও।
এই বছরের জরিপে ৬২ ভাগ মানুষ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে মনে করলেও, ২২% মানুষ মনে করে দেশটি ভুল পথে এগোচ্ছে। অর্থাৎ, নেট সমর্থন হচ্ছে ৪০%। অথচ গত বছর নেট সমর্থন ছিলও ৫৭%।
৬৯% বাংলাদেশের বর্তমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে ইতিবাচক উত্তর দিলেও গত বছর সংখ্যাটি ছিলও ৮৩%। গত বছর নেতিবাচক উত্তর ১৩% দিলেও, এই বছর নেতিবাচক উত্তর দেয় ২০% মানুষ।
বাসস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে,
“এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক ইন্সটিটিউট (আইআরআই)-এর গবেষণা প্রতিবেদনেও কাছাকাছি ফল পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত গবেষণা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৪ ভাগ নাগরিক মনে করে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।”
এখানে ২০১৭ সালের জনমত তুলনা না করে, ২০১৮ সালের জরিপের সাথে তুলনা করা হয়েছে ২০১৬ সালের, অর্থাৎ, দুই বছর পূর্বের জরিপের সাথে।
আইআরআই এর এই জরিপে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, খালেদা জিয়ার বন্দী অবস্থা, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ও আগামী নির্বাচন সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্নের উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টটি পাওয়া যাবে আরআইআর এর ওয়েবসাইটে।