অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

এপ্রিলের ৮ তারিখে এনটিভি-তে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে জনৈক গবেষক দাবী করেন যে ইথানলের কুসুম গরম মিশ্রনে কুলকুচি করলে, ইথানল বাষ্প গলায় পৌঁছার মাধ্যমে করোনাভাইরাস মারা যায় এবং এইভাবে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা যেতে পারে। প্রতিবেদনটির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসনকেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়।

এভাবে সরাসরি ইথানল সেবন করে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা করা যায় না। উপরন্তু এভাবে বাষ্পের মাধ্যমে ইথানল গ্রহণের ফলে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরাসরি ইথানল সেবন না করার জন্য সতর্কতা প্রদান করা হয়।

আলোচ্য গবেষক, ড. মো আলিমুল ইসলাম, পেশায় বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ের একজন ভাইরোলজিস্ট বলে জানা যায়। তিনি নতুন করোনাভাইরাসের মত পূর্বে প্রাপ্ত কিছু ভাইরাসের উপর ইথানলের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে এমন দাবী করেন। অথচ তার সুনির্দিষ্টভাবে নতুন করোনাভাইরাসের উপর কোন গবেষণা নেই এবং এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি যাদের উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন তাদের কারোরই কোভিড-১৯ সনাক্ত হয়নি।

আলোচ্য গবেষক, ড. মো আলিমুল ইসলাম, পেশায় বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ের একজন ভাইরোলজিস্ট বলে জানা যায়।

এনটিভির রিপোর্টে ভাপ নেওয়ার পদ্ধতিও প্রদর্শন করা হয়।

এমন দায়িত্বহীন একটি রিপোর্ট প্রচার এনটিভির মত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত গণমাধ্যমে প্রচার নিন্দনীয় এবং এর ফলাফল ভয়ঙ্কর হতে পারে।বাষ্পের মাধ্যমে ইথানল বা এলকোহল গ্রহণ মারাত্মক হতে পারে। বাজারে স্পিরিট হিসেবে প্রাপ্ত ইথানলে মেথানল নামক বিষ মেশানো থাকে। ইতিমধ্যে ইরানে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা হিসেবে এরকম বিষাক্ত এলকোহল সেবনের ফলে অন্তত ৪৪ জন মারা গিয়েছে

এনটিভি ভিডিওটি সরিয়ে নিলেও তাদের ওয়েবসাইট থেকে লিখিত রিপোর্টটি নামিয়ে নেয়নি।

এনটিভি ভিডিও রিপোর্টটি তাদের অনলাইন মাধ্যমগুলো থেকে সরিয়ে ফেললেও এইটি ইতিমধ্যে লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে এবং এই রিপোর্টটি বিভিন্ন মাধ্যমেও আপলোড করা হয়েছে। এছাড়াও এই পর্যালোচনা লেখার সময় পর্যন্তও এনটিভির নিউজ পোর্টালে “করোনাজনিত জ্বর, কাশি থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন” শিরোনামে একটি সংবাদ পাওয়া যায়।

সবুজ বাংলাদেশ ২৪ ডট কম নামক একটি বেনামী নিউজ পোর্টালে এমন রিপোর্ট প্রথম প্রকাশ হয়।

সবুজ বাংলাদেশ ২৪ ডট কম নামক একটি বেনামী নিউজ পোর্টালে এমন রিপোর্ট প্রথম প্রকাশ হয়।

এই তথাকথিত গবেষকের গবেষণা প্রচারিত হয় সর্বপ্রথম ‘সবুজ বাংলাদেশ ২৪’ নামক একটি বেনামী নিউজ পোর্টালে। যার ধারাবাহিকতায় আলোচ্য রিপোর্টটি এনটিভিতে করা হয়। ঐ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়—

“এই পদ্ধতি গবেষকদলেন প্রধান তাঁর নিজের উপর, বিভাগীয় কয়েকজন শিক্ষানবীশ গবেষক ও কাজের বুয়ার উপর পরীক্ষা করে একই ফলাফল পেয়েছেন বলে তিনি জানান। সবাই সম্ভাব্য করোনা বা মৌসুমি জ্বরে ভুগতেছিলেন বলেও জানান তিনি।”

এটি সঠিক যে জীবাণুনাশক হিসেবে নূন্যতম ৬০% ইথানলের দ্রবণে (যেমন, এলকোহল ব্যবহারে) নতুন করোনাভাইরাস মারা যায়। কিন্তু সেটি যখন পোষক দেহের বাহিরে অবস্থা করে তখনই এভাবে এটিকে ধ্বংস করা যায়। তাই এই ধরণের দ্রবণ জীবাণুনাশক হিসেবে শরীরের বহিরাংশে (যেমন, হাত পরিষ্কার করতে) ও বিভিন্ন পৃষ্ঠ জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়।

একাত্তর টিভি গুজব

একাত্তর টিভিও একই গবেষকের দাবী প্রচার করলে শুধুমাত্র চ্যানেলটির ফেসবুক পেইজেই রিপোর্টটি ৩০ লক্ষাধিক বার দেখা হয়। ভিডিওটি এখনো তাদের ফেসবুক পেইজে পাওয়া যায়।

পোষক শরীরের বাইরে ভাইরাস জড় বস্তুর ন্যায় অবস্থান করে। তখন এর মধ্যে কোন জৈবিক প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না; যেমন, এটি নিজের প্রজনন বা বৃদ্ধি ঘটাতে পারে না। ফলে খুব সহজেই একে জীবাণুনাশক দ্বারা ধ্বংস করা যায়। কিন্তু পোষক শরীরের ভেতর প্রবেশের পর ভাইরাস সক্রিয় হয়ে উঠে এবং কোষের ভেতরে প্রবেশ ঘটিয়ে কোষ ধ্বংস করে নিজের বৃদ্ধি ঘটায়। অর্থাৎ, পোষক দেহের ভিতরে ও বাহিরে ভাইরাসের কার্যপদ্ধতি খুবই ভিন্ন

রিপোর্টে উল্লেখিত পদ্ধতিতে ইথানল সেবনে আক্রান্ত সব কোষগুলোতে ভাপ পৌঁছানো সম্ভব না। উপরন্তু এটি শরীরের সুস্থ অংশে পৌঁছে সেটিকে এবং বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়ারও ক্ষতি ঘটাতে পারে।

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. "Inhaling Alcohol Is Dangerous". National Capital Poison Center.
  2. "At least 44 dead from drinking toxic alcohol in Iran after coronavirus cure rumor". US Today. (মার্চ ১০, ২০২০).
  3. "CDC Statement for Healthcare Personnel on Hand Hygiene". CDC.
  4. Fredric S. Cohen. "How Viruses Invade Cells". National Institute of Health. (মার্চ ৮, ২০১৬).

মন্তব্য

প্রচারিত মাধ্যম

  • "করোনাজনিত জ্বর, কাশি থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন" - ntvbd.com
  • "ইথানলে দূর হবে করোনা !" - ekattor.tv

কোন মিডিয়া অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি? রিপোর্ট করুন