গুজবের উৎপত্তি
এই গুজবের প্রচলন হয় ২০১৪ সালের জুন মাসে সেই বছরের ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের ঠিক প্রারম্ভে। প্রশ্ন-উত্তরের ছলে ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে বলা হয়—
পৃথিবীর কোন দেশে আজান দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ?
উত্তর: ব্রাজিল
পরবর্তীতে এই গুজবের উপর ভিত্তি করে আরও কিছু পোস্ট প্রচার করা হয় যেখানে বলা হয় কেনো বিধর্মীদের কোনো দলকে সমর্থন দেওয়া উচিৎ নয়।
ব্রাজিলের আযান বিষয়ক গুজবের বর্ধিত সংস্করণ হিসেবে আর্জেন্টিনা সম্পর্কিত গুজবটির প্রচলন শুরু হয়, এই বছর জুলাই মাসের ৪ তারিখ থেকে, কোপা আমেরিকা ২০২১ এর সেমিফাইনাল পর্বে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল উঠলে। আমাদের অনুসন্ধানে ‘ফরিদ আলম’ নামক একজনের পোস্ট সর্ব প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে লেখা—
ব্রাজিলে আজান দেয়া নিষিদ্ধ। আর্জেন্টিনায় আল্লাহু আকবার বা আল্লাহর নাম নিলে গ্রেফতার। তারপর ও আপনি কেমন করে এদের কে ভালোবাসতে পারেন?মুসলিম হওয়া কি এতোই সহজ?
সত্যতা যাচাই
ব্রাজিলে আযান দেওয়া কিংবা আর্জেন্টিনায় ‘আল্লাহু আকবার’ বলার উপর কোনোরূপ নিষেধাজ্ঞার প্রমাণ এসকল ফেসবুক পোস্ট ছাড়া বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায় না। ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করে এমন দুটি কড়া আইন প্রণয়ন করা হলে তা অবশ্যই সারা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হতো কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আযান প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের আরোপিত সীমাবদ্ধতা
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার জন্য আহ্বানের মাধ্যম আযান ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনায় বিশেষভাবে নিষিদ্ধ না করা হলেও পৃথিবীর এমন অনেক দেশে (যেমন জার্মানি, ভারত, ইজরাইল, যুক্তরাজ্য, সুইডেনে) এই ব্যাপারে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ রয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ শব্দে লাউডস্পিকার ব্যবহার করে আজান দেওয়ার উপর আরোপ করা হয়।
এসব নিষেধাজ্ঞা কেবল সংখ্যালঘু মুসলিম দেশে নয়, মুসলিম প্রধান দেশেও প্রচলিত রয়েছে। তাজিকিস্তানে ২০০৯ সালে আযানে লাউডস্পিকারের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়। সম্প্রতি সৌদি আরব মসজিদের লাউডস্পিকারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রায় শুধুমাত্র ‘আযান’ ও ‘ইকামত’ প্রদানের আইন প্রণয়ন করে, অর্থাৎ, নামাজের তেলওয়াতের সময় লাউডস্পিকারের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।[1] এছাড়াও তুরস্কে ১৯৫০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তুর্কি ভাষায় আজান প্রচারের আইন ছিলো।[2]
ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক আজান প্রদানের নীতিমালা প্রদান করা হয়।[3] সেই বছর দেশটির সুমাত্রা দ্বীপের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী একজন মহিলাকে উচ্চ আওয়াজে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে মসজিদে আজান প্রদানের বিষয় সমালোচনা করায়, ধর্ম অবমাননা করার জন্য ১৮ মাসের জেল প্রদান করে। মেইলিয়ানা নামক ঐ মহিলা ২০১৬ সালে তার এক মুসলিম প্রতিবেশীর নিকট এই ব্যাপারে মন্তব্য করলে, সেই প্রতিবেশীর মাধ্যমে গুজব ছড়ায় যে মেইলিয়ানা আজান নিষিদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করছেন। এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ স্থানীয়রা প্রায় ১৪টি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর করে।[4] মেইলিয়ানার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়া এই নীতিমালা প্রদান করে।