বর্তমান সরকার ২০১৯ সালে গঠিত হলেও এসব বার্তায় ২০০৬ সাল, অর্থাৎ ১৭ বছরের পূর্বের উপাত্তের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অপর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিএনপি দায়িত্ব ছাড়ে। ধারণা করা যায় বিএনপি সরকারের সাথে তুলনা করা জন্যই ২০০৬ সালের উপাত্ত এখানে আনা হয়েছে।
তবে ১৭ বছরের এই দীর্ঘ সময়ে জাতীয় ও বৈশ্বিক বেশ কিছু বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়াও বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ ২০০৯ সাল থেকে বিগত তিন মেয়াদে টানা সরকার গঠনের আগেও সর্বশেষ ২০০৬–২০০৮ মেয়াদে তত্ত্ববধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল।
এসব বিবেচনায় ২০০৬ সালের উপাত্তের পাশাপাশি এর পরবর্তী সরকারগুলো গঠনের কাছাকাছি সময়ে প্রাপ্ত উপাত্তগুলোও এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা, যাতে সেটি উন্নয়নের ক্রমধারার কিছুটা সামগ্রিক ধারণা দেয়।
তথ্যসূত্র হিসেবে আমরা এখানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর উপাত্তের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করেছি। এ ছাড়াও প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থার উপাত্তগুলোও উল্লেখ করেছি।
দাবী # ১: বেকারত্বের হার
“২০০৬ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৬.৭৭%। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে বেকারত্ব কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৬%।”
— জুলাই ২৮, ২০২৩
দাবিটি: সত্য-অসত্য বিমিশ্রিত
তথ্য উৎস | ২০০৫-০৬ | ২০১০ | ২০১৩ | ২০১৬-১৭ | ২০২২ |
---|---|---|---|---|---|
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো | ৪.৩% | ৪.৫% | ৪.৩% | ৪.২% | ৩.৬% |
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)[1] | ৩.৬% | ৩.৫% | ৪.৪% | ৪.৪% | ৪.৭% |
বার্তায় ৬.৭৭% বলায় হলেও বিবিএস এর উপাত্ত অনুযায়ী ২০০৬ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৪.৩%। ২০২৩ সালের বেকারত্বের হারের কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে ২০২২ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বেকারত্বের হার ৩.৬%। যা বার্তায় উল্লেখিত উপাত্তের সাথে সামঞ্জস্য।
তবে আইএলও এর উপাত্ত মতে, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার এখন ৪.৭%, যা ২০০৬ সালের থেকে ১.১ পয়েন্ট বেশি।
দাবী # ২: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা
“২০০৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৫,৬৭২টি। বর্তমান সরকারের সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৮,৮৯১ টি।”
— আগস্ট ৩, ২০২৩
দাবিটি: সত্য-অসত্য বিমিশ্রিত
২০০৫-০৬ | ২০১০ | ২০১৩ | ২০১৮ | ২০২১ |
---|---|---|---|---|
৮২,০২০[4] | ৭৮,৬৮৫[5] | ১,০৬,৮৫৯[6] | ১,৩৪,১৪৭[7] | ১,১৮,৮৯১[8] |
বিবিএস এর উপাত্ত অনুযায়ী ২০০৬ সালে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৮২,০২০টি। বার্তায় ১৬,৩৪৮টি কম বলা হয়েছে।
তবে ২০২১ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১,১৮,৮৯১টি। যা বার্তায় উল্লেখিত উপাত্তের সাথে সামঞ্জস্য।
দাবী # ৩: চা উৎপাদন
“২০০৬ সালে চা উৎপাদন ছিল ৩৯ মিলিয়ন কেজি। বর্তমান সরকারের সময়ে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ মিলিয়ন কেজি।”
— আগস্ট ১১, ২০২৩
দাবিটি: অসত্য
২০০৬ | ২০১০ | ২০১৩ | ২০১৮ | ২০২২ |
---|---|---|---|---|
৫৩,৪০৭[9] | ৫৮,৭৬৭[10] | ৬৬,২৫৯[11] | ৮২,১৩৪[12] | ৯৩,৮২৯[13] |
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপাত্ত মতে ২০০৬ সালে চা উৎপাদন ছিল ৫৩ মিলিয়ন কেজি এবং তা সর্বশেষ সম্পূর্ণ বছর ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৯৪ মিলিয়ন কেজি। কিন্তু বার্তায় এই দুটি উপাত্ত যথাক্রমে ১৪ ও ১৩ মিলিয়ন কেজি কম উল্লেখ করা হয়েছে।
দাবী # ৪: লবণ উৎপাদন
“২০০৬ সালে লবণ উৎপাদন ছিল ৮.৫৪ লক্ষ মে. টন। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে লবণ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২৩.৪৮ লক্ষ মে. টন।”
— আগস্ট ১২, ২০২৩
দাবিটি: অসত্য
২০০৫-০৬ | ২০০৬-০৭ | ২০০৯-১০ | ২০১০-১১ | ২০১২-১৩ | ২০১৭-১৮ | ২০২২-২৩ |
---|---|---|---|---|---|---|
১৫.৭৫ | ১০.৬৫ | ১৭.০৪ | ৯.৫৬ | ১৬.৩৪ | ১৪.৯৩ | ১৮.৩৯* |
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর হিসাব মতে ২০০৫-০৬ ও ২০০৬-০৭ মৌসুমে লবণের উৎপাদন ৮.৫৪ লক্ষ মে. টনের বেশি ছিল। এ ছাড়া ২০২২-২৩ মৌসুমে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত লবণের উৎপাদন দাঁড়ায় ১৮.৩৯ লক্ষ মে. টন। এ উৎপাদন দেশের গত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে বিসিক।
লবণের মৌসুম ধরা হয় ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। গত এপ্রিল মাসে সংস্থাটি এই মৌসুমে ২০ লক্ষ মে. টন লবণ উৎপাদন হওয়ার আশা ব্যক্ত করলেও, ২৩.৪৮ লক্ষ মে. টন উৎপাদনের কোনো তথ্য এ যাবত প্রকাশিত হয়নি।[16] এর কাছাকাছি একটি সংখ্যা (২৩ লাখ ৮৫ হাজার মে. টন) এবার লবণ উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা হিসেবে পাওয়া যায়।[17]
দাবী # ৫: নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা
“২০০৬ সালে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ছিল মাত্র ৫৫%। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে ৪৩.৭% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮.৮%।”
— আগস্ট ১৩, ২০২৩
দাবিটি: সত্য-অসত্য বিমিশ্রিত
তথ্য উৎস | ২০০৬ | ২০১০ | ২০১৩ | ২০১৮ | ২০২১ | ২০২২ |
---|---|---|---|---|---|---|
জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি)[18] | ৫৫.১৮% | ৫৫.০১% | ৫৫.৬৭% | ৫৭.৭২% | ৫৯.১৩% | ৫৯.১১% |
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এর জয়েন মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি) এর তথ্য মতে, ২০০৬ সালে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ছিল ৫৫%। এ ছাড়া গত বছরের জরিপ অনুযায়ী সেটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৯.১১% এ।
সরকার থেকে প্রেরিত বার্তায় ২০০৬ সালের উপাত্ত সঠিক হলেও সর্বশেষ উপাত্তটি সঠিক নয়। এ ছাড়া ৫৫% এর ৪৩.৭% বৃদ্ধি হলে সেটি দাঁড়ায় ৫৫.২৪%, ৯৮.৮% নয়। তাই প্রদত্ত উপাত্ত গানিতিকভাবেও ভুল।
দাবী # ৬: মাতৃমৃত্যুর হার
“২০০৬ সালে মাতৃ মৃত্যুর হার ছিল (প্রতি লাখে) ৩৭০ জন। বর্তমান সরকারের সময়ে তা কমে মাতৃ মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৬১ জন।”
— আগস্ট ১৬, ২০২৩
দাবিটি: অসত্য
২০০৬ | ২০১০ | ২০১৩ | ২০১৮ | ২০২১ | ২০২২ |
---|---|---|---|---|---|
৩৩৭ | ২১৬ | ১৯৭ | ১৬৯ | ১৬৮ | ১৫৬ |
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্যমতে, ২০০৬ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল লাখে ৩৩৭ জন, যা ২০২২ সালের সর্ব শেষ পরিসংখ্যানে কমে এসে দাঁড়ায় ১৫৬ জনে।
সরকারি বার্তায় পাঠানো উপাত্তে বছরগুলোতে যথাক্রমে ৩৩ জন ও ৫ জন বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।
অনলাইনে চলমান বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আপনার গঠনমূলক পর্যবেক্ষন কিংবা অভিমত আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো। আমাদের পাঠাতে হবে [email protected]এই ঠিকানায়। অথবা যাচাই-এর ফেসবুক পেইজ-এ সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারেন।