অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

সময়ের কণ্ঠস্বর-এর সূত্রমতে ‘জনৈক ফেইসবুক ইউজারের অ্যাকাউন্ট’ থেকে সর্বপ্রথম এই সংবাদটি স্ট্যাটাস আকারে আসে। যদিও সেই ব্যক্তিটির পরিচয়ের ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য সংবাদটিতে পাওয়া যায়না। খবরে আরও প্রকাশ―

গেল বছরের ২৭ ডিসেম্বর নরসিংদীতে খাসির মাংস বলে কুকুরের মাংস বিক্রির দায়ে কালাম মাসুদ নামে এক ব্যক্তিকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মূল খবরটি যেহেতু ২০১৭ সালে প্রকাশিত, তাই গেলো বছর বলতে সম্ভবত ২০১৬ কে বোঝানো হয়েছে। ২০১৬ এর সংবাদগুলো ঘাঁটলে ‘ঢাকা টাইমস’ নামক আরেকটি নিউজ পোর্টালের ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬ তারিখের একটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়―

নরসিংদীতে খাসির মাংস বলে কুকুরের মাংস বিক্রির দায়ে কালাম মাসুদ নামে এক ব্যক্তিকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সামসুল তাবরীজ তাকে হাতেনাতে আটক করার পর এই আদেশ দেন।

প্রচারিত এই সংবাদটি মূলত আরও দুই বছর আগে, ২০১৪ সালের ১০ই জুন তারিখের, যা জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছিলো।[1] এমনকি ২০১৬ সালে যেসব অনলাইন পত্রিকা এই কালাম মাসুদকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাদের অনেকেই ২০১৪ সালেও একই খবর ছেপেছিল।

এর থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় ২০১৬ তারিখে এমন কোন ঘটনা ঘটে নি।

হায়দ্রাবাদ শহরে ‘কুকুরের মাংসের বিরিয়ানি’

সময়ের কণ্ঠস্বরসহ অন্যান্য অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত এই বিষয়ক প্রতিবেদনে ও ফেইসবুকে প্রচারিত বিভিন্ন পোস্টে ব্যবহৃত ছবিগুলো অনুসন্ধান করে ২০১৬ সালের ১৩ই ডিসেম্বর ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দ্রাবাদ শহরের একটি ঘটনার সাথে সম্পর্ক পাওয়া যায়।[2]

শহরটির ‘গাউস হোটেলে’ নাকি ‘কুকুরের মাংসের বিরিয়ানি’ বিক্রি করা হচ্ছে ― এমন খবর ছড়ানো হয় ‘হোয়াটস অ্যাপে’। খবর ছড়ানোর সাথে সাথেই বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসে। পুলিশ হোটেলের মালিককে গ্রেফতার করে ১৪ই ডিসেম্বর, ২০১৬ তারিখে এবং ফুড ইনস্পেক্টর হোটেল থেকে মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সংগ্রহীত নমুনা মাংস কুকুরের হওয়ার কোন প্রমাণ না পাওয়ায়, ডিসেম্বর ২৪ তারিখে পুলিশ গাউস হোটেলের মালিককে ছেড়ে দেন। এরপর হোটেল মালিক মোহাম্মাদ রব্বানি উক্ত ভুয়া সংবাদের বিপক্ষে পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ আনলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অনুসন্ধানে নামে। অতঃপর ১৬ জন হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহারকারীর ম্যাসেজ ট্রেস করে চন্দ্রমোহন নামক এক ছেলেকে গুজবের মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে তার বন্ধুদের খুব প্রিয় খাবারের জায়গা ছিল এই ‘হোটেল গাউস’। সে চেয়েছিল তার বন্ধুদেরকে এই হোটেলের ব্যাপারে ভয় দেখিয়ে এর থেকে দূরে রাখতে। তাই সে এই ম্যাসেজটি ছড়িয়েছিল তার বন্ধুদের মাঝে।

যেহেতু ঢাকার হোটেলে কুকুরের মাংসের বিরিয়ানী বিক্রয় হওয়া সংক্রান্ত গুজব প্রচার, হায়দ্রাবাদ শহরের ঘটনাটি সূত্রপাতের পর থেকেই হচ্ছে এবং ব্যবহৃত ছবিগুলো এক, তাই বলা যায় এটি সম্পূর্ন ভিত্তিহীন এবং উপরের গুজবটি হতে প্রসূত।

এই গুজবটি ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে ‘বেওয়ারিশ কুকুর হত্যার’ ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে ‘কুকুরের মাংসের বিরিয়ানি’ তৈরির প্রক্রিয়া হিসেবে।