অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

১৮৮৬ সালের ৮ মে, ‘জন স্টিথ পেম্বারটন’ প্রথম কোকাকোলার ফর্মুলা আবিষ্কার করেন। তিনি কোকা পাতা (Coca leaves) আর কোলা বাদাম (Kola nuts) দিয়ে একধরণের পানীয় তৈরি করেন। এ পানীয় মাদকাসক্ত, অবসাদগ্রস্ত এমনকি এলকোহলে আসক্ত রোগীদের উপকারে আসতো বলে ধরা হতো। পেম্বারটনের হিসাবরক্ষক ‘ফ্রাংক ম্যাসন রবিনসন’ কোকাকোলা নামটি প্রবর্তন করেন এবং তিনিই ১৮৮৭ সালে কোকাকোলার চিরপরিচিত লোগোটি ডিজাইন করেন।[1] সেই সময় বিশেষভাবে প্রচলিত বর্ণসজ্জা ‘স্পেন্সেরিয়ান স্ক্রিপ্ট’ (Spencerian script) ব্যবহার করে রবিনসন লোগোটি ডিজাইন করেন।

১৮৫০ থেকে ১৯২৫ সালে স্পেন্সেরিয়ান স্ক্রিপ্ট আমেরিকায় বহুল ব্যবহৃত ছিলো। টাইপরাইটার আবিষ্কারের পূর্বে এই বর্ণসজ্জা অলিখিতভাবে দাফতরিক কাজের জন্য আদর্শ হিসেবে ধরা হতো। এই কারনে কোকাকোলার লোগোটি সেই সময়ের জন্য যথার্থ লোগো হিসেবে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়।[2]

কোকাকোলা লোগো (১৮৮৭-১৮৯০)

কিন্তু ১৮৯০ থেকে ১৮৯১ সালে এক বছরের জন্য লোগোটি বদলানো হয়।[3] যদি ‘লা মুহাম্মদ, লা মক্কা’ স্লোগানের জন্যই মূল লোগোটি তৈরি করা হয়ে থাকে, তাহলে তা একবছরের জন্যও বদলানো যুক্তিযুক্ত না।

কোকাকোলা লোগো (১৮৯০-১৮৯১)

এখানে উল্লেখ্য, কোকাকোলার আবিষ্কারের সময়কালে মুসলিম বিশ্বের সাথে আমেরিকা কিংবা ইহুদী ধর্মালম্বিদের চলমান কোন বিশেষ কোন্দল ছিল না। এছাড়াও আরবি ভাষাও আমেরিকায় খুব সুপরিচিত ছিল না। তাই রবিনসন উল্টো করে আরবিতে কিছু লিখে ইসলাম অবমাননা করবেন, এটি ঠিক যুক্তিসঙ্গত নয়।

“লা মুহাম্মদ, লা মক্কা” কথাটি শুদ্ধ আরবি বর্ণে লিখলে দাঁড়ায় এইভাবে―
لا محمد لا مكة

কিন্তু তা কোনভাবেই কোকাকোলার লোগোর প্রতিবিম্বের সাথে সাদৃশ্য না। এছাড়াও আরবি শব্দ ‘লা (لا)’ (যার অর্থ ‘না’), লেখার জন্য আরবি হরফ ‘লাম’ এর সাথে ‘আলিফ’ যোগ করতে হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকরা তাদের প্রচারিত গ্রাফিক্সে ‘লাম’-এর সাথে কোন ‘আলিফ’ যোগ না করেই, অনেকটা জোর করেই দাবীটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। হয়তোবা এটি নেহাতই মুসলমানদের বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা।

এই ব্যাপারে কোকাকোলা কোম্পানির ব্যাখ্যা

কোকাকোলা তাদের ওয়েবসাইটে ব্যাপারটিকে আর দশটা গুজবের মতো বলেই অভিহিত করে।[4] তারা দাবী করেন তৎকালীন সময়ে জর্জিয়া প্রদেশে আরবি জানা লোকের সংখ্যা নেহাতই নগণ্য। ১৯৯০ দিকে সৌদি আরব সরকার কর্তৃক একটি বিশেষ কমিটিও এই উপসংহারে আসে যে কোকা-কোলার লোগোতে ইসলামকে অবমাননা করে এমন কোন উপাদান ব্যবহার করার হয় নি।

এছাড়াও কোকাকোলা এই ব্যাপারে মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুফতি শেখ নাসর ফরিদ ওয়াসেল এর বক্তব্য উল্লেখ করেন। ২০০০ সালের মে মাসে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “কোকাকোলার এই ট্রেডমার্ক ইসলাম কিংবা মুসলমানদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আঘাত করেনা।” তিনি আরো বলেন, “ইসলাম সর্বদা গুজব এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচারের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সর্বসাধারণের ক্ষতিসাধনের বিপক্ষে।”

আমাদের কথা

পৃথিবীর সব ভাষাতেই অল্পবিস্তর সাদৃশ্য থাকে। এমন সাদৃশ্য অনেক সময় প্রকৃতিতেও দেখা যায়। দেয়ালের আঁকিবুঁকি, মেঘমালা, ব্যবহার্য বস্তু কিংবা খাবারদাবারে অনেক নাম, সংকেত, প্রতীক আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেসবকে বিশ্বাস দিয়ে বিবেচনা না করে যুক্তি, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা দিয়ে বিবেচনা করলে এসব আর রহস্য থাকেনা। কোকাকোলার বিরুদ্ধে অভিযোগটিও হয়তো খুঁতখুঁতে মনোভাব থেকে কারো মনে এসেছে কিংবা হতে পারে বাণিজ্যিক অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকেই এর উৎপত্তি।

সর্বশেষ হালনাগাদ:

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. "Frank Mason Robinson". Wikipedia.
  2. "Spencerian script". Wikipedia.
  3. Journey Staff. "The Coca-Cola logo story". Coca-Cola UK.
  4. "Coca-Cola Rumours & Facts". Coca-Cola Canada.

মন্তব্য