২০১৭ সালের শুরু দিকে এই বার্তাটি অনলাইনে প্রচার হওয়া শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র, উগান্ডা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এই বার্তাটি অনুবাদিত হয়ে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এটি প্রচার শুরু হয় এপ্রিলের শেষের দিকে এবং এই মাসের শুরুর দিকে এটি তীব্রভাবে ভাইরাল হয়।
‘ম্যাচাপু’ (Machupo) (‘Bolivian hemorrhagic virus’ বা ‘black typhus’ নামেও পরিচিত) একটি স্থানীয় রোগ যা উত্তর ও পূর্ব বলিভিয়ায় দেখা যায়।[1] ১৯৬২-১৯৬৪ সালের দিকে এটি বলিভিয়ায় মহামারি আকারে দেখা দেয়।[2] ২০০৮ সালের দিকে সেদেশে এই ভাইরাস সংক্রামণ আবারও বৃদ্ধি পায় বলে জানা যায়। কিন্তু এর বাইরে অন্য কোন দেশে এর প্রাদুর্ভাব এখনো পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয় নি।
‘প্যারাসিটামলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ানোর’ এই বার্তাগুলো কেবল নিজস্ব দাবীতেই প্রচারিত হচ্ছে। এই দাবীটি সমর্থন করে এমন কোন সংবাদ কিংবা স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বাংলাদেশ তথা বিশ্বের কোন দেশেই পাওয়া যায় নি। উপরন্তু, ইন্দোনেশিয়ার ‘খাদ্য ও ঔষধ বিষয়ক প্রশাসন’ তাদের একটি বার্তায় এটিকে নিতান্তই গুজব বলে উল্লেখ করে বলে―[3]
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই গুজবটি ছড়ানোর পূর্বে এজেন্সিটি এই ধরণের কোন ঘটনার রিপোর্ট পায় নি যাতে ‘ম্যাচাপু’ ভাইরাস প্যারাসিটামল কিংবা অন্য কোন ঔষধে পাওয়া গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্তৃপক্ষও এই দাবীটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়―[4]
অধিকাংশ ভাইরাসের মত, ম্যাচাপু ভাইরাসও শুষ্ক পরিবেশের মধ্যে টিকে থাকতে পারে না বিশেষত যেমনটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেটে থাকে।
‘ম্যাচাপু’ ভাইরাস ‘এরেনাভাইরাস’ (Arenavirus) গোত্রীয় রক্তপ্রদাহসহ জ্বরের কারণ হতে পারে।এই মূহুর্তে এটি কেবল দক্ষিন আমেরিকায় দেখা যায়।
এটি মূত্র কিংবা ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর মলের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়।
ভারতের ‘BITS Pilani’-এর প্রফেসর সুমন কাপুর এই প্রসঙ্গে বলেন―[6]
যদি বার্তাটি সত্য হতো, তাহলে ভারতে ইতিমধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যেতো, যেহেতু এখানে প্যারাসিটামল অনেক বেশী হারে খাওয়া হয়ে থাকে।
এই গুজব বার্তায় ব্যবহৃত হাসপাতালের ছবিটির বেডশিটের উপর নাম থেকে এটি ভারতের জয়পুরের ‘সাওয়া মান সিং’ হাসপাতালের ছবি বলে সনাক্ত করা যায়। এই একই ছবি পূর্বে ‘প্যাকেটের খাবার পানীর’ মাধ্যমে জ্বর সংক্রামিত হওয়ার একটি গুজবে ব্যবহার করা হয়। ভারতেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এইধরনের গুজব সম্বলিত বার্তা প্রচার হলেও এমন কিছু প্রচলিত কোন গণমাধ্যমগুলোতে পাওয়া যায় নি। এমনকি এই পর্যন্ত ভারতে এই ভাইরাস সংক্রামণের একটি ঘটনাও রিপোর্ট হয় নি। যদিও বাংলাদেশে, ভারতের তৈরি প্যারাসিটামল পি-৫০০-এর ছবি ব্যবহার করে গুজবটি ছড়ানো হচ্ছে।
এতগুলো দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সতর্ক বার্তা প্রচার হলেও, বলিভিয়া ছাড়া অন্য দেশগুলোতে উল্লেখ্যজনকহারে ‘ম্যাচাপুর’ মত একটি অতি সংক্রামক রোগ ছড়ানোর কোন রিপোর্ট পাওয়া যায় নি।