অনুসন্ধান

প্রথম প্রকাশ:

এই গুজবটির উৎপত্তি ধরা যায় ২০০৬ সালের নভেম্বরে, যখন কিছু মাধ্যমে দাবী করা হয় পেপসি এবং মেন্টোস খেয়ে ব্রাজিলের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও গুজবটিতে মৃতের কোন নাম পাওয়া যায়নি, নির্দিষ্ট কোনো শহর বা এলাকার নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং সময়কাল হিসাবে দিন-তারিখের বদলে কেবল ‘গত সপ্তাহ’ উল্লেখ করা হয়। হালে পানি না পাওয়া এই গুজবটি কয়েক বছর পর একই বিবরণীতে ‘গত বছর’ ঘটে যাওয়া ঘটনা হিসাবে রটতে থাকে যার পুনরাবৃত্তি এপর্যন্ত বেশ কয়েকবার হয়েছে। কিন্তু প্রমাণিত হওয়া তো দূরে থাক, ব্রাজিলের জাতীয় কিংবা এলাকাভিত্তিক কোন সংবাদ মাধ্যমে এই মৃত্যুর খবর বা সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

‘সায়ানাইড বিষ’ তৈরি হয়?

ইউটিউবে খুঁজলে মেন্টোস/পোলো এর মত মিন্ট জাতীয় ক্যান্ডি এবং পেপসি/কোক জাতীয় কোলা এর সংমিশ্রণে উষ্ণপ্রস্রবণ (Geyser) প্রতিক্রিয়ার শ’খানেক ভিডিও পাওয়া যাবে, যার কয়েকটির ভিউ প্রায় দশ মিলিয়ন। মজার বিষয় হচ্ছে, এই অস্বাভাবিক বাহ্যিক উদগিরণ দর্শনীয় হলেও তা থেকে সায়ানাইড উৎপন্ন হয় – এমন ধারনাটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং এটি নিতান্ত একটি গুজব ছাড়া কিছু নয়। প্রায় একযুগ ধরে এই গুজব প্রচারিত হলেও, এই দুই ধরণের উপাদান একসাথে খেয়ে কেউ মারা যাওয়ার কিংবা হতাহত হওয়ার ঘটনা কোন নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যমে কখনো আসেনি। পেপসি ও মেন্টোসের মত সহজলভ্য ও জনপ্রিয় খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে যদি এত সহজেই সায়ানাইডের মত মারাত্মক বিষ তৈরি হতো, তাহলে এই বিষ দ্বারা মানুষ মরে যাওয়া খুব সাধারণ একটি ঘটনা হতো।

পেট ফেটে যায়?

ডিসকভারি চ্যানেলের বিখ্যাত অনুষ্ঠান মিথবাস্টারসের ২০০৬ সালের এক পর্বে মেন্টোস ও সফট ড্রিঙ্কসের এই গুজবটি ভাঙ্গা হয়।[1] পরীক্ষা করে দেখা যায়, স্বাভাবিকভাবেই এসব সোডার বোতল খুললে ভেতরে প্রেসারাইজড কার্বন-ডাইঅক্সাইড বের হয়ে এসে এক প্রকার ঝর্নার সৃষ্টি করে। বোতলের ভেতরে যে কোন বস্তু প্রবেশ করানো হলেও সেই বস্তুটি বোতলের তলায় যেতে যেতে এই ধরণের কার্বন-ডাইঅক্সাইডের বুদবুদ তৈরি হয়। মিন্ট জাতীয় এই ক্যান্ডিগুলোর মধ্যে থাকা উপাদান বুদবুদ হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে আরও তরান্বিত করে আরও জোরাল ঝর্নার সৃষ্টি করে।

তবে কেউ যদি মেন্টোস খেয়ে সোডা (পেপসি/কোক/সফট ড্রিঙ্কস) খায়, সেটি পাকস্থলীতে পৌঁছানোর পথেই উৎপন্ন গ্যাস উবে যেতে থাকে। অবশিষ্ট কিছু থাকলেও তা পাকস্থলীকে কিছুটা স্ফীত করতে পারে। কিন্তু পাকস্থলী ফেটে যাওয়ার মত গ্যাসের ঝর্না তৈরি হওয়ার মত অবস্থায় থাকে না।

ইউটিউবে যেরকম মেন্টোস এবং পেপসির ভল্কানিক ইরাপশনের ভিডিও আছে, সেরকম অগণিত ভিডিও আছে যেখানে দেখানো হয়েছে শতভাগ ক্ষেত্রে এই দুটি খেয়ে সায়ানাইডের প্রতিক্রিয়ায় কিংবা পেট ফেটে কেউ মারা যায়নি। কিন্তু কোলা খাওয়ার পরে একাধিক মেন্টোস খেলে মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়ে বমিভাব কিংবা পেটজনিত সমস্যা হতে পারে।[2]

সুতরাং, মেন্টোস এবং পেপসিসহ যেকোনো ধরনের সোডাজাতীয় সফট ড্রিঙ্কস একসাথে বা আগে-পরে খেলে মারা যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যদিও সেটা কতটা সুস্বাদু এবং সুখকর হবে সে ব্যাপারে প্রশ্ন থাকে।

সর্বশেষ হালনাগাদ:

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. "Diet Coke and Mentos Makes Stomach Explode". MythBusters.
  2. "Diet Coke And Mentos Human Rocket Explosion !!". YouTube. (ডিসেম্বর ১২, ২০১১).

মন্তব্য