মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর কড়া নজরদারী ও অসহযোগিতার কারনে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে রোহিঙ্গাদের উপর হামলার ছবি বা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারে না। তথ্য, ছবি ও ভিডিওর এই দুষ্প্রাপ্যতার সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, বানোয়াট বা অসংশ্লিষ্ট ছবি অনলাইনে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, কোনরূপ সূত্র না দেখিয়ে ব্যবহার করে থাকে। এমনকি বিভিন্ন চলচ্চিত্রের ফুটেজ প্রচার করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের চিত্র বলে।
এসব ভুল ও বীভৎস ছবির বহুল অপপ্রচারের কারণে ‘রোহিঙ্গা ইস্যু’ নিয়ে অনলাইনে খোঁজ করলে সঠিক তথ্য বা ছবি ঢাকা পড়ছে ভুল ছবিগুলোর আড়ালে। ফলে এমন একটি সংবেদনশীল ঘটনা তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে এবং অপর আরেক গোষ্ঠী এসব অপপ্রচারগুলো দেখিয়ে সম্পূর্ন বিপর্যয়টিকেই বানোয়াট বলে প্রচার করছে।
তাই জনসাধারণের মধ্যে এই বিষয় সতর্কতা বাড়াতে এখানে এই বিষয়ক কিছু বহুল প্রচারিত ভুল ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
দাবী: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ছবি।

সঠিক তথ্য: তিব্বতের নাগরিকদের নিজের গায়ে আগুন জালিয়ে চীনের শাসনের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে, ২০১২ সালের মার্চ ২৬ তারিখে জামপা ইয়াশে নামক এই ব্যক্তি নয়া দিল্লীতে নিজের গায়ে আগুন জালিয়ে দেয়।
দাবী: তুরস্কে বৌদ্ধ নিধনের ছবি।

সঠিক তথ্য: ২০০৮ সালে কাঠমন্ডুতে চীন এমব্যাসির সামনে প্রতিবাদরত তিব্বতি একজন ভিক্ষুকে নেপালি পুলিশ জব্দ করে।
দাবী: তুরস্কে বৌদ্ধ নিধনের ছবি।

সঠিক তথ্য: ২০০৮ সালে তিব্বতিদের চীন বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চীন সরকার আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করে। সেই গ্রেফতারের একটি ছবি এটি।
দাবী: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারা ছবি।

সঠিক তথ্য: ২০১০ সালের জুলাই ২ তারিখে কঙ্গো-এর সাঞ্জে গ্রামে তেল ট্যাংকার বিস্ফোরণে প্রায় ২৩০ জন অধিবাসী মারা যায়। ট্যাঙ্কারটি লিক হয়ে আগুন সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় সময় এই ছবিটি নানান গোষ্ঠী দ্বারা ধর্মীয় উস্কানি সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দাবী: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে মিছিল বের করেছে সেদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

সঠিক তথ্য: দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনে (মার্চ ২০, ২০১৪) "পাঠক মতামত (Op-ed)" বিভাগে রোহিঙ্গা সংঘাতের সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে রাখাইন প্রদেশ থেকে সিট্টো ও মংডু-কে আলাদা করে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার একটি "ব্যক্তিগত অভিমত" প্রকাশিত হলে, ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ তারিখে মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন-এ অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে শত শত মিয়ানমার নাগরিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ছবিগুলোতে "Get out, Embassy of Bangladesh", "We Challenge Bangladesh", "Don't forget to take your bangle from our mother land" ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার ধরে রাখতে দেখা যায়।
অসত্য তথ্য: ছবিগুলো অক্টোবর ২০১৬-এর ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রচার করা হলেও এসব ২০১৪ সালের ছবি।
দাবী: ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে নিহত রোহিঙ্গাদের লাশ হিসেবে।

সঠিক তথ্য: জানুয়ারি ২০০৯ সালে অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে প্রবেশের সময়, থাই নেভি শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে। হিউম্যান রাইট ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে এই ছবিটি রয়েল থাই নেভির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
দাবী: ছবিটি বিভিন্ন সময় ব্যবহৃত হয়েছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ছবি হিসেবে।

সঠিক তথ্য: চিনের কুইনঘাই প্রদেশে এপ্রিল ১৭, ২০১০ তারিখে ঘটিত ভূমিকম্পে নিহতদের গণশবদাহের জন্য তিব্বতী ভিক্ষুগন প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দাবী: বিভিন্ন মাধ্যমে বহুল প্রকাশিত এই ছবিগুলো প্রচার করা হয় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনের ছবি হিসেবে।

সঠিক তথ্য: বলিভিয়ার রেয়স শহরে ৪-বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে পুলিশী হেফাজত থেকে বের করে প্রকাশ্যে হত্যা করে স্থানীয়রা। (নভেম্বর ২০১৬)
দাবী: "মৃত রোহিঙ্গা মায়ের দুধপান করছে অবুঝ শিশু"

সঠিক তথ্য: ছবিটি নেপালি উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করা 'শিরিস কো ফুল' (Shirish ko Phool) নামক চলচ্চিত্রের একটি ফুটেজ। চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত, যা ২০১৩ সালে নেপালে মুক্তি পায়।
দাবী: "মিয়ানমারের মংদুতে নিজ ঘর আগুন দিচ্ছে রোহিঙ্গা বাঙ্গালিরা।"

সঠিক তথ্য: ছবিতে প্রদর্শিত দুষ্কৃতিকারীরা পরিচয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম নন এবং এই ছবিগুলো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সাজানো এমন প্রমাণ পেয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।