জুন ২, ২০১৭ তারিখ সকালে কিছু অজ্ঞাতনামা লোক স্থানীয় যুবলীগ নেতার মৃত্যুর জের ধরে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায় ৩টি গ্রামে বসবাসকারী আদিবাসীদের ঘরে আগুণ লাগিয়ে দেয়। তিনটিল্লা, মানিকঝড় ও বাট্টিপাড়া গ্রামে এই আক্রমণে প্রায় একশতাধিক বাড়ীতে লুট ও অগ্নিসংযোগের তথ্য পাওয়া যায়।
শুক্রবার এই খবর সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে সকাল ১১টার দিকে। তথ্য ও ছবির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে ফেইসবুকে কেউ কেউ নিজস্ব মন মত ছবি ও তথ্য পরিবেশন করে। এছাড়াও বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল দুপুর নাগাদ বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশ করে। ‘রাঙামাটি প্রতিনিধি’ উল্লেখ থাকলেও তারা সোশ্যাল মিডিয়ার এসব পোস্টগুলোর উপর ভিত্তি করেই খবর প্রকাশ করে। শুধুমাত্র দ্রুত রিপোর্ট করার প্রতিযোগিতায় এসব সংবাদ মাধ্যমগুলো কিছু ভুল ছবি তাদের প্রতিবেদনে ফিচার করে। বহুল প্রচারের পর অনেকে নিঃশব্দে সেসব মুছেও ফেলে। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরার পরও দৈনিক ইত্তেফাক পরের দিন তাদের প্রধান শিরোনামে এমন একটি ভুল ছবি ছাপায়।
একটু একটু করে সংযোজনা-বিয়োজনের পর সত্য ঘটনাও একসময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং হারিয়ে ফেলে গুরুত্ব। পরবর্তীতে সৃষ্ট ঘোলাটে পরিস্থিতির সুবিধা নেয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এবং জন্ম দেয় আরও নতুন সহিংসতার। যেমনটা আমরা দেখেছি রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের ঘটনায়।
ফেইসবুক কখনই খবর বা তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস না। দেশে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ফেইসবুক ভিত্তিক খবর তৈরি করা বন্ধ করতে হবে। নয়তো এর খেসারত কেবল পত্রিকাগুলোকে না, সমগ্র জাতিকেই দিয়ে যেতে হবে। বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সহিংসতাগুলোর মত সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে সংবাদ মাধ্যমগুলোর উদাসীনতা কোনভাবেই কাম্য নয়।
দাবী: ছবিটি লংগদুতে অদিবাসীদের ঘর অগ্নিসংযোগের।

সঠিক তথ্য: এই ছবিটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার টঙ্গিতে বয়লার বিস্ফোরণের।
দাবী: ছবিটি লংগদুতে অদিবাসীদের ঘর অগ্নিসংযোগের।

সঠিক তথ্য: গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে নভেম্বর ৬, ২০১৬ তারিখে সাঁওতালদের উচ্ছেদের সময় পুলিশ তাদের বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবিটি আল-জাজিরায় প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া।
দাবী: ছবিটি লংগদুতে অদিবাসীদের ঘর অগ্নিসংযোগের।

সঠিক তথ্য: গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে নভেম্বর ৬, ২০১৬ তারিখে সাঁওতালদের উচ্ছেদের সময় পুলিশ তাদের বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবিটি আল-জাজিরায় প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া।
দাবী: ছবিটি লংগদুতে অদিবাসীদের ঘর অগ্নিসংযোগের।

সঠিক তথ্য: ২০১০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাজেকে বাঙ্গালীদের সাথে এক সংঘর্ষে প্রায় ৬ জন জুম্মা আদিবাসী মারা যায়। ছবিটি এই সংঘর্ষে নিহত বুদ্ধাপতি চাকমার সন্তানদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়কার।
দাবী: ছবিটি লংগদুতে অদিবাসীদের ঘর অগ্নিসংযোগের।

সঠিক তথ্য: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে Phaj Ej Hmoob নামক একজন ফেইসবুক ইউজার ছবিটি "Never lived your kids home alone like this" বিবরণ দিয়ে কোন পটভূমি ছাড়া এই ছবি তিনটি প্রকাশ করে জুন ৪, ২০১৭ তারিখে। পরবর্তীতে এটি কম্বোডিয়ার বিভিন্ন ফেইসবুক একাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়। এবং কিছুদিন পর তা প্রচার হওয়া শুরু হয় লংগদুতে অগ্নিসংযোগের ছবি হিসেবে। Phaj এর পোস্টটিতে অনেকেই ছবিটির ঘটনা জানতে চাইলেও সে ঘটনার আর কোন বিবরণ দেয় নি। এছাড়া আমরাও তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু তার থেকে কোন প্রত্যুত্তর পাওয়া যায় নি।
দাবী: ছবিটি লংগদুতে অদিবাসীদের ঘর অগ্নিসংযোগের।

সঠিক তথ্য: ছবিটি ২০১০ সালের রামগড় উপজেলার একটি সংঘর্ষের ছবি বলে তথ্য পাওয়া যায়। যা থেকে জানা যায় জালিপাড়ায় এপ্রিল ১৭, ২০১০ তারিখে একজন মার্মা পুলিশ ছবিটি তুলে।
দাবী: ছবিটি লংগদুতে অদিবাসীদের ঘর অগ্নিসংযোগের।

সঠিক তথ্য: বরিশাল নগরীর বেলতলা বাজার এলাকায় একটি বিস্কুটের গোডাউন আগুনে পুড়ে যায়। ছবিটি পাওয়া যায় কালের কন্ঠের ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখের একটি রিপোর্টে।